তুমি_আমার_প্রিয়তম
পর্ব৪
আফিয়া_আফরোজ_আহি
আর্শিয়া সকাল সকাল তৈরি হচ্ছে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য। তৈরি হয়ে নিচে নামলো। খেতে বসে বাবা ও ভাইয়ার সাথে অফিসের বেপারে কিছুক্ষন কথা বলে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। আজকে সে একা বেরিয়েছে সাথে ড্রাইভারও নেয় নি। সে স্বাধীন ভাবে চলতে পছন্দ করে।তার খুব ইচ্ছে ছিলো ড্রাইভিং শিখবে তাই তার বাবাও মানা করে নি। এমনকি নিজেকে রক্ষা করার জন্য তাকে ক্যারাটে ও শেখানো হয়েছে।তার বাবা একজন বিসনেস ম্যান।বিসনেস দুনিয়ায় শত্রুর অভাব নেই।এতো কিছু শিখানোর পরেও তার বাবা একমাত্র মেয়েকে একা কিছুতেই ছাড়তে চায় না তাই আরিশ কে সবসময় পাঠায় আর্শিয়ার সাথে। কিন্তু আর্শিয়া কি কারো কথা শোনার মেয়ে সে যা বলবে তাই করবে। সেই জন্য আজকেও বাবার কথা না শুনে একা একা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। বেরিয়ে তারিন কে কল করে বললো বাসার নিচে নামতে। অতঃপর তারিন কে নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে চলো।
ভার্সিটিতে যেয়ে দেখে মাঠের মধ্যে মানুষ জড়ো হয়ে আছে। আর্শিয়া আর তারিন কিছুটা সামনে যেয়ে দেখে আরাভ, রিয়াজ ওদের ফ্রেন্ডরা মিলে কিছু ছেলেদের মারছে। আর্শিয়া হটাৎ খেয়াল করে একটা ছেলে আরাভের দিকে লাঠি নিয়ে যাচ্ছে। আরাভের উল্টো দিকে ঘুরে ছিল। তাই সে দিকে তার খেয়াল নেই সে অন্য একজনকে মারছে।আর্শিয়া তার ব্যাগ তারিনের হাতে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে ছেলেটার হাতের লাঠি ধরে ফেললো।তারপর ছেলেটার হাত থেকে একটানে লাঠিটা নিয়ে তাকে মারা শুরু করলো।আরাভ হটাৎ কাউকে তার পিছনের দিকে কাউকে মারামারি করতে দেখে পিছনে ফিরে দেখে আর্শিয়া একের পর এক ছেলেকে লাঠি দিয়ে আঘাত করছে। আরাভ কিছুক্ষন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।এরপর নিজেও ছেলে গুলোকে মারা শুরু করলো।হটাৎ কেউ কিছু বোঝার আগে আরাভের পিঠে কিছু একটা ধাক্কা খেলো সে পিছনে তাকিয়ে দেখে আর্শিয়া পড়ে যাচ্ছে। আরাভ তাড়াতাড়ি আর্শিয়াকে ধরে ফেললো। তাকিয়ে দেখে আর্শিয়ার কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে। কেউ কিছু বোঝার আগে পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। কি থেকে কি হয়ে গেলো কেউ কিছু বুঝলো না।আরাভ যেন হতবাক হয়ে গেলো।আসলে যেই ছেলে আর্শিয়ার জন্য আরাভকে একটু আগে মারতে পারেনি সেই ছেলেই আর্শিয়ার মাথায় মারে।আরাভ আর্শিয়ার গালে হালকা চাপর মেরে বলে উঠলো,
“এই মেয়ে কথা বলো। কি হয়েছে তোমার। চোখ খোলো ”
তারিনও কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। মস্তিস্ক কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।যখন খেয়াল হলো তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে বলো,
“দোস্ত কি হয়েছে তোর। চোখ খোল না ইয়ারর। ভাইয়া ওর কপাল থেকে তো রক্ত পড়ছে তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে হসপিটালে চলুন।”
আরাভ আর্শিয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। ওর ফ্রেন্ডদের বললো এদিকটা সামলে নিতে আর রিয়াজ কে বললো ওর সাথে আসতে। রিয়াজ তাড়াতাড়ি ড্রাইভিং সিটে বসলো।আরাভ আর্শিয়াকে কোলে নেওয়া অবস্থায় পিছনে বসলো। তারিন আরাভের পাশে বসে আর্শিয়াকে অনবরত ডেকে চলেছে। গাড়ি হসপিটালের সামনে থামলে আরাভ আর্শিয়াকে নিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে ভিতরের দিকে হাঁটা দিল। তারিনও তার সাথে গেলো।আরাভ রিসেপশনে জিজ্ঞেস করে একটা কেবিনে ঢুকে আর্শিয়াকে বেডে শুইয়ে দিল। এর মধ্যে ডক্টর এসে জিজ্ঞেস করলো,
“এনার কি হয়েছে ”
আরাভ অস্থির কণ্ঠে বললো,
“মাথায় আঘাত পেয়েছে। মাথা থেকে রক্ত পড়ছে। ডক্টর প্লিজ তাড়াতাড়ি কিছু করুন।”
“আপনারা চিন্তা করবেন না আমি দেখছি”
তারিন কেবিনের এক কোনায় দাঁড়িয়ে কান্না করেই যাচ্ছে। ওর চোখের সামনে এখনো ভাসছে আর্শিয়ার আঘাত পাওয়ার দৃশ্য। আরাভ তারিনের কাছে এসে বললো আর্শিয়ার ফ্যামিলি মেম্বারদের বলার জন্য। তারিন আর্শিয়ার ফোন থেকে আরিশ কে কল দিল। ফোন রিসিভ করে আরিশ বললো,
“কিরে বনু আজকে হটাৎ এই সময়ে কল দিলি”
তারিন কাপা কাপা গলায় বললো,
“ভাইয়া আমি তারিন ”
“তারিন তুমি আর্শিয়ার ফোন থেকে ফোন করেছে, আর্শিয়া কোথায়?”
তারিন কান্না করতে করতে বললো,
“ভাইয়া আপনি তাড়াতাড়ি সিটি হসপিটালে চলে আসুন ”
আরিশ উদিগ্ন কণ্ঠে বললো,
“হটাৎ হসপিটালে আসবো কেন? আর্শিয়া কোথায় ওকে ফোন দাও। ও কোথায়, ও ঠিক আছে তো?”
তারিন কান্নার ফলে কিছু বলছে না। ঐদিক থেকে আরিশ অনবরত জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে “কি হয়েছে”। আরাভ তারিনের থেকে ফোন নিয়ে আরিশ কে বললো,
“ভাইয়া আর্শিয়া কপালে ব্যাথা পেয়েছে।কপাল থেকে রক্ত পড়ছে। আমরা ওকে নিয়ে হসপিটালে এসেছি আপনিও তাড়াতাড়ি চলে আসেন।”
“আমি আসছি ” বলে আরিশ অফিসে থেকে বেরিয়ে পড়লো।ডক্টর আর্শিয়ার মাথায় ব্যান্ডেজ করে ওর হাতে সেলাইন দিয়ে আরাভদের উদ্দেশ্যে বললো,
“চিন্তার কোনো কারণ নেই।আঘাতটা বেশি গুরুতর নয়। আমি সেলাইন দিয়ে দিয়েছি আশা করি কিছুক্ষনের মধ্যেই ওনার জ্ঞান ফিরবে। আপনাদের মধ্যেই কেউ একজন আমার সাথে আসুন আমি মেডিসিন গুলোর নাম বকে দিচ্ছি।ওনার জ্ঞান ফিরলে আমাকে বলবেন।”
রিয়াজ ডক্টরের সাথে গেলো।আরাভ আর্শিয়ার পাশে একটা টুলে বসলো আর তারিন আর্শিয়ার পায়ের কাছে বেডে বসলো।কিছুক্ষনের মধ্যে আর্শিয়ার জ্ঞান ফিরলো।আর্শিয়া চোখ খুলে উঠে বসার চেষ্টা করলো। আরাভের আর্শিয়াকে উঠে বসতে সাহায্য করলো।আরাভ তারিনকে বললো ডক্টরকে ডেকে আনার জন্য। তারিন যেতেই আরাভ আর্শিয়া কে ধমকে বলে উঠলো,
“তুমি কি পাগল? মাথায় কিছু নাই তোমার।মারামারির ভিতরে ঢুকেছো কেন ”
“হ্যা, আপনার জন্য পাগল আমি।আর আপনাকে ওই লোকটা মারতে যাচ্ছিলো ওকে আটকাতেই তো আমি মারামারির ভিতরে গিয়েছি ”
“আমাকে মা*র*লে তোমার কি?”
“আপনাকে মা*র*লে আমার অনেক কিছু”
“আমার মন চাইতেছে খু*ন করে ফেলি তোমাকে”
“করুন খুন। আমি মানাতো করিনি। কিন্তু খু*নে*র অস্ত্র হতে হবে আপনার ওই তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া। আর সমাধি হতে হবে আপনার ওই প্রশস্ত বুকে। তাহলে আমি ম*রেও শান্তি পাবো”
এই কথার পৃষ্ঠে কথা বলার মতো কিছু খুঁজে পেলো না আরাভ।এরমধ্যেই তারিন ডক্টরকে সাথে নিয়ে কেবিনে ঢুকলে।পিছনে আরিশ ও আসল। ডক্টর আর্শিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,
“এখন কেমন লাগছে আপনার ”
“মাথায় ব্যাথা হচ্ছে ”
“এটা স্বাভাবিক। আমি মেডিসিন দিয়ে দিয়েছি সময়মত খাবেন। আর ৩-৪পর ব্যান্ডেজ টা খুলিয়ে নিয়ে যাবেন।এই কয়দিন ব্যান্ডেজ ভেজাবেন না। এখন আপনি রেস্ট নিন বিকেলে আপনাকে ডিসচার্জ দেওয়া হবে ” বলে ডক্টর চলে গেল
এবার আরিশ জিজ্ঞেস করলো,
“ব্যাথা পেলি কিভাবে?”
ডক্টর সামনে থাকায় আর্শিয়া এতক্ষন আরিশ কে দেখেনি। হটাৎ আরিশের কণ্ঠ শুনে তাকিয়ে দেখে আরিশ ওর পাশে দাঁড়ানো।
“ইয়ে মানে ভাইয়া এমনিই ব্যাথা পেয়েছি ”
“এমনি মানুষ কিভাবে ব্যাথা পায় ”
“আসলে…উস্টা খেয়ে ইটের ওপর পরে গিয়েছিলাম”
“সত্যি কথা বল আর্শিয়া”
পাশ থেকে তারিন বললো ভাইয়া আমি বলছি কি হয়েছে। তারিন আরিশকে বললো কিভাবে ব্যথা পেয়েছে।আরিশ সব শুনে আর্শিয়ার দিকে তাকাতেই,
“দেখো ভাইয়া মানুষের জান বাঁচানো কিন্তু ফরজ”
“সেটা না হয় মানলাম। তুই তো ওকে ডেকেও সাবধান করতে পারতি। তুই মারামারি করতে গেলি কেন?”
“তখন আমার মাথা কাজ করে নায় ”
“তুই বাসায় চল তোর মাথাকে কিভাবে কাজ করাতে হয় তা আমি দেখে নিব”
আরাভের দিকে তাকিয়ে বললো, “ধন্যবাদ ভাই, ওকে হসপিটালে নিয়ে আসার জন্য”
“ওতো আমার জন্যই ব্যাথা পেয়েছে তাই এটা আমার দায়িত্ব। ধন্যবাদ দিবেন না প্লিজ”
এরমধ্যেই রিয়াজ ওষুধ নিয়ে এলো। আর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“এখন কেমন লাগছে ছোটো আপু?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া।শুধু মাথায় একটু ব্যাথা করছে”
আর্শিয়া আরিশ এর দিকে তাকিয়ে বললো,
“চল ভাইয়া বাসায় যাই ”
“বাসায় যাই মানে কি? ডক্টর তোকে বিকেল পর্যন্ত থাকতে বলেছে ”
“তুই তো জানিস হসপিটালে থাকতে আমার ভালো লাগে না”
“ভালো না লাগলেও কিছু করার নাই ”
“তুই আমাকে নিয়ে যাবি নাকি আমি একা একা চলে যাবো ”
“অসুস্থ শরীরেও তুই আমাকে থ্রেট দিচ্ছিস”
“হ্যা দিচ্ছি, এখন আমাকে নিয়ে যাবি কিনা বল”
“তু্ই বস আমি ফর্মালিটি পূরণ করে আসছি আর একজন নার্স পাঠিয়ে দিচ্ছি সেলাইন খোলার জন্য “বলে আরিশ চলে গেল। আরিশ যেতেই আর্শিয়া তারিনকে বলে উঠলো,
“তু্ই ভাইয়াকে সত্যিটা বললি কেন ”
“বলবো নাতো কি করব। তু্ই জানিস আমি কতো ভয় পেয়েছিলাম।আল্লাহর কাছে হাজার সুকুরিয়া বেশি কিছু হয়নি ”
আরিশ সাথে একজন নার্স নিয়ে এলো। নার্স সেলাইন খুলতেই আর্শিয়া লাফ দিয়ে নিচে নেমে গেল। সবাই অবাক একটু আগে এই মেয়ের কপাল ফাটল আর এখন সে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। আর্শিয়া সবাইকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
“আশ্চর্য তোমরা সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
আরাভ ধমকে বললো,
“তোমার না কপালে ব্যাথা। ব্যাথা নিয়ে লাফালাফি করছো কেন?”
“ব্যাথা তো কপালে, পায়ে তো আর না ”
আরিশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“চল ভাইয়া বাড়ি যাই ”
আরিশ, আরাভ আর রিয়াজের সাথে হ্যান্ডশেক করে ধন্যবাদ দিয়ে তাঁদের থেকে বিদায় নিল। তারিনকে বললো তাঁদের সাথে আসতে, তাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে। তারিন বাধা দিয়ে বললো সে একা যেতে পারবে। তাই আরিশ আর্শিয়াকে নিয়ে বাড়ি চলে গেল।
#চলবে