তুমি_আমার_প্রিয়তম
পর্ব৫
আফিয়া_আফরোজ_আহি
“কি হয়েছে তোর আর্শিয়া?মাথায় ব্যান্ডেজ কেন?কি হয়েছে মামনিকে বলে। কিভাবে ব্যাথা পেলি?”
আর্শিয়া আর আরিশ বাসায় আসার পর দরজা খুলে আলেয়া বেগম বিচলিত কণ্ঠে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। আর্শিয়া আশার পথে গাড়িতে আরিশকে রিকোয়েস্ট করেছে বাসায় যেন সে সত্যি কথা না বলে। আরিশও তাকে বলে দিয়েছে এরকম ঘটনা দ্বিতীয় বার যেন না হয়। আরিশ তার মাকে থামাতে আর্শিয়ার শিখেয়ে দেওয়া কথা বললো,
“মা বনু উস্টা খেয়ে ইটের ওপর পরে ব্যাথা পেয়েছে। টেনশনের কিছু নেই।ডক্টর বলছে ১সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে”
“বেশি কিছু হয়নি বলছিস, অল্প ব্যথায় ব্যান্ডেজ করার মতো মেয়ে ও না ”
আর্শিয়া তার মামনিকে থামাতে বললো,
“সত্যিই বেশি কিছু হয়নি মামনি। তুমি টেনশন করো না”
এরমধ্যেই আর্শিয়ার বাবা নিচে নেমে এসেছেন। তিনি আজকে লাঞ্চ টাইমেই বাসায় চলে এসেছেন। আর্শিয়ার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে কিছুক্ষন থমকে দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর তাড়াতাড়ি নিচে এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। এতো আদরের মেয়ে তার। মেয়ের গায়ে সামান্য আঁচড় লাগলেও মনে হয় তার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়।
“এসব কিভাবে হলো মা?”
আর্শিয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল এখন না চাইলেও তাকে বাবার কাছে মিথ্যে কথা বলতে হবে নাহলে বাবা যে অনেক বেশি কষ্ট পাবেন।
“আসলে বাবা আমি বেখেয়ালি ভাবে হাঁটতে যেয়ে উস্টা খেয়ে ইটের ওপর পরে গিয়েছিলাম। ডক্টর বলে দিয়েছে বেশি কিছু হয়নি। তুমি টেনশন করোনা বাবা”
“এরপর সাবধানে চলা ফেরা করবে মা। তুমিতো জানো তুমি আমার একমাত্র সন্তান তুমি ব্যাথা পেলে বাবার যে অনেক কষ্ট হয় ”
“তুমি কষ্ট পেয় না বাবা এর পর আমি সব সময় সাবধানে চলাফেরা করবো। এখন একটু হাসো”
আবারার সাহেব মেয়ের কথায় মুচকি হাসলেন।
ডাইনিং থেকে আলেয়া বেগম বললো
“বাবা মেয়ের ভালোবাসা শেষ হলে, আর্শিয়া তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় সবাই একসাথে লাঞ্চ করব ”
“মামনি আমার ছোটো বাবা টা কোথায় গো?”
“রুশা ওকে খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়াতে নিয়ে গেছে। তু্ই ফ্রেশ হতে যা ”
আর্শিয়া ঘরে এসে জামাকাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে গিয়ে টেবিলে বসে পড়লো।আর্শিয়া নিজের হাতে খেতে নিবে তার আগে দেখে তার বাবা তার মুখের সামনে খাবার ধরে রেখেছে। সে তার বাবার দিকে তাকাতে তার বাবা বললো,
“এই অসুস্থ শরীর নিয়ে আমার মা টাকে কষ্ট করে নিজের হাতে খেতে হবে না। বাবা খাইয়ে দিচ্ছি খাও। খাওয়া শেষ করে রুমে যেয়ে ওষুধ খেয়ে রেস্ট নেও ”
আর্শিয়া ও ভদ্র মেয়ের মতো বাবার হাতে খেয়ে রুমে এসে পড়লো।রুমে এসে ওষুধ খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। মাথায় ব্যাথা প্লাস ওষুধ খাওয়ায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো।হটাৎ অনুভব করলো ছোটো ছোটো হাতে কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ডাকছে “আত্মা, ও আত্মা উঠনা “।আর্শিয়া পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে আরুশ তাকে ডাকছে। ও আরুশ কে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিল।
“আত্মা তোমার মাথায় কি হয়েছে ”
আর্শিয়া ঘুম ঘুম কণ্ঠে বললো,
“আত্মা ব্যাথা পেয়েছে। তুমি একটু আদর করে দাও তো”
আরুশ তার ছোটো ছোটো হাতে আর্শিয়ার ব্যথার জায়গায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সাথে চুমুও দিচ্ছে।
“আত্মা উঠনা। আমি তোমার সাথে খেলবো”
আর্শিয়া উঠে বসল ও বুঝে গেছে আরুশ এখন ওকে আর ঘুমাতে দিবে না। উঠে ফ্রেশ হয়ে আরুশের সাথে কিছুক্ষন খেললো। এর মধ্যে তারিন তাকে ফোন দিল। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তারিন বলে উঠলো,
“এখন কেমন লাগছে দোস্ত? মাথা ব্যাথা কমেছে ”
“হ্যা কিছুটা কমেছে”
“তু্ই জানিস আমি কতো ভয় পেয়েছিলাম। আমি তোকে ঐভাবে দেখে তোদের কাছে গিয়ে দেখি আরাভ ভাইয়া অবাক হয়ে তোর দিকে চেয়ে আছে। যেন সে বুঝতেই পারছে না কি থেকে কি হলো। আমি যখন ভাইয়াকে বললাম তোকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার কথা। তখন ভাইয়া তোকে এক ঝটকায় কোলে নিয়ে হাঁটা দিল। এমনকি সারা রাস্তা ভাইয়া তোকে কোলে নিয়েছিল।এরপর তারিন আর্শিয়াকে সমস্ত ঘটনা বললো।
পুরো ঘটনা শুনে সে অবাক। আরাভ তাকে কোলে নিয়েছিল কথাটা ভাবতেই তার লজ্জা লাগছে।তাও নাকি সারা রাস্তা কোলে নিয়ে ছিলো। উফফ সে আর ভাবতে পারছে না। তারিনের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে নিচে চলে গেল আরুশকে নিয়ে।
অপরদিকে আরাভ নিজের ব্যালকনিতে বসে আজকের ঘটনা ভাবছে। দুই দিন আগে দেখা হওয়া একটা মেয়ে তার জন্য কপাল ফাটিয়ে ফেললো। আরাভের মা আরাভের রুমে এসে তাকে না পেয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে তার ছেলে গভীর ভাবে কি যেন ভাবছে।সে আরাভের কাঁধে হাত রাখতেই আরাভ হতচকিয়ে উঠলো।
“কি নিয়ে এতো ভাবছো?”
“কিছুনা। আচ্ছা মা একটা মানুষ কেন তোমার ওপর আশা আঘাত থেকে তোমাকে বাঁচাবে?”
“যদি সে আমাকে ভালোবাসে বা পছন্দ করে তখন। কিন্তু তু্ই হটাৎ এই কথা জিজ্ঞেস করলি কেন ”
আরাভ তার মাকে আর্শিয়ার সাথে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে আজকের পর্যন্ত সব ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে আরাভের মা বললেন,
“মেয়েটা হয়তো তোকে ভালোবাসে ”
‘কিন্তু মা মেয়েটার সাথে আমার দেখা হয়েছে মাত্র দুইদিন আগে ”
“কাউকে ভালোলাগতে বা ভালোবাসতে দুই বছরও লাগে না আবার দুই মাসও লাগে না। কাউকে ভালোবাসার জন্য দুই মিনিটই যথেষ্ট। মেয়েটাকে একদিন বাড়ি নিয়ে আসিস আমিও দেখতে চাই কোন মেয়ের এতো সাহস যে আরিয়ান খান আরাভাকে ধমক দিতে পারে। এমনকি তার জন্য কপালও ফাটালো।এখন ডিনার করতে নিচে আয়।”
আরাভ ডিনার করে ঘরে এসে ভাবলো আর্শিয়াকে ফোন দিবে কি দিবে না। পরক্ষনে ভাবলো মেয়েটার একবার খোঁজ নেওয়া দরকার। তাই আর বেশি কিছু না ভেবে আর্শিয়াকে কল দিল।
আর্শিয়া নিজের রুমের বেলকোনিতে রাখা দোলনায় বসে ছিলো। ডিনার করে ঘরে এসে ওষুধ খেয়ে ঘুনানোর চেষ্টা করেছিল। ঘুম না আসায় বেলকনিতে চলে এসে। পাশে ফোন বাজতে হাতে নিয়ে দেখে আরাভ কল দিয়েছে।রিসিভ করে বিনয়ী স্বর সালাম দিল। ওপাশ থেকে সালামের উত্তর নিয়ে আরাভ জিজ্ঞেস করলো,
“ব্যাথা কি কমেছে নাকি বেড়েছে ”
“না বাড়ে নি। আগের তুলনায় এখন অনেকটা কম ”
“শোনো আগামী দুই দিন ভার্সিটিতে আশার দরকার নেই। তুমি বাসায় রেস্ট নাও।”
“আপনি কি আমাকে অর্ডার করছেন”
” অবশ্যই অর্ডার করছি। গতকাল তুমি আমাকে অর্ডার করেছো আজ আমি তোমাকে সমান সমান।আর শোনো মেয়ে আমি তোমার সিনিয়র।জুনিয়রদের সব সময় সিনিয়রদের কথা শুনে চলতে হয়। তাই তুমিও আমার কথা শুনবা।বুঝেছ?”
“জি বুঝেছি”
“ওষুধ ঠিক মতো খাচ্ছো?”
“জি। আপনি ডিনার করেছেন?”
“হ্যা করেছি।এই অসুস্থ শরীর নিয়ে জেগে থাকার দরকার নেই। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পর। আর নিজের খেয়াল রেখো”
“জি। আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ ”
“আল্লাহ হাফেজ ”
বলে আরাভ কল কেটে দিল।আর্শিয়া শুয়ে এদিক ওদিক করছে তার ঘুম আসছে না। আর মধ্যে তার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে থাকা নাম্বারটা দেখে ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি চলে এলো সাথে কিছু লুকায়িত অভিমান।ফোন রিসিভ করে চুপচাপ বসে রইলো। ওপর পাশের ব্যক্তিই প্রথমে কথোপকথন শুরু করলো,
“আমার কলিজা টা কি করে ”
“তোমাকে খু*ন করার প্ল্যান করে ”
“খু*ন করার কারণটা বললে এই অধম আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকত”
“তুমি আমার সাথে কথা বলোনা কতো দিন ”
“রাগ করে না কলিজা।আমি একটু বিজি ছিলাম তাই ফোন করা হয় নি।এখন ফ্রি তাই এখন থেকে সব সময় খোঁজ খবর রাখবো ”
আর্শিয়া যার সাথে এখন কথা বলছে সে হলো আর্শিয়ার খালাতো ভাই নাবিল ।যে কিনা আর্শিয়ার সব সময়ের ক্রাইম পার্টনার। ভাই কম বন্ধু বেশি।
আর্শিয়া মন খারাপ করে বললো,
“আমি তোমাকে মিস করছি। তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।তুমি দেশে আসবা কবে?”
“আমিও আমার কলিজাকে অনেক মিস করছি।তোর হিটলার খালু নিজে না এসে আমাকে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে।বলেছে আমাকে ছাড়া নাকি কাজ হবেই না তাইতো আমার আসা।আমি খুব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে দেশে ফিরবো”
“আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো ”
“আমিও আমার কলিজাকে দেখার অপক্ষায় আছি।এখন বলে তোর জন্য আশার সময় কি নিয়ে আসব”
“চকোলেট ”
“অনলি চকোলেট?”
“হুম ”
“ওকে নিয়ে আসব”
আর্শিয়া নাবিলের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ঘুমিয়ে গেল।
#চলবে?