বাস্তব ঘটনা
ঘটনা লেখিকা : বর্ষা
আমার নাম বর্ষা। আমাদের দেশের বাড়ি কুষ্টিয়া সদরে। আমরা খুব ছোট থাকতেই ঢাকায় চলে আসি। সেখানে থেকেই লেখাপড়া করি। এমনকি ছোট থেকেই বড় হয়েছি। কারন আমার বাবা ঢাকায় চাকরি করতো। একসময় আমাদের আর্থিক অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে নযরে। যার কারণে আমাকে খুব অল্প বয়সেই চাকরি করতে হয়। তখন আমরা ঢাকা শেরেবাংলা নগর কৃষি কলেজ বটতলায় থাকতাম। সেখান থেকে ফার্মগেট বেশি একটা দূরে নয়। আমি প্রতিদিন বটতলা থেকে ফার্মগেট যেতাম।
অফিসে ফিরতাম রাত করে। এভাবে প্রতিনিয়ত অফিসে যাওয়া আসা করতাম। হঠাৎই একদিন বিকেলে আমার ছুটি হয়। পাশেই জিয়া উদ্যান ছিল। তাই সেখানে ঘুরাঘুরি শেষে মাগরিবের আজানের একটু আগে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। জিয়া উদ্যানের সাথেই ছিল বিশাল একটা মাঠ। বর্তমান সেখানে সরকারি অনেক কার্যালয়ে হয়েছে। তখন সেখানে বাণিজ্য মেলা বসতো। এখন অবশ্য অন্য কোথাও হয়ে থাকে। আমি সেই মাঠের ভিতর দিয়ে হেটে যাচ্ছি। সেখানে অনেক বড় বড় বটগাছ আছে।
সেখান থেকে কিছুটা দূরে তালগাছে ছিল। তো আমি সেই মাঠ দিয়ে আসছি। সেখান থেকে আমার বাসায় যেতে মাত্র দশ থেকে পনের মিনিট লাগে। যদি মেইন রোড দিয়ে যায় তাহলে ত্রিশ মিনিট লাগবে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার কারণে ওই মাঠ দিয়ে ই আসতে থাকি,,। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে। আমার মনে তখন কোন ভয় নেই। কেননা আমি আগে কখনো কোন কিছু অনুভব করিনি। হঠাৎ করে আমার সামনে সাদা শাড়ি পরা একটি মেয়ে হেটে যাচ্ছে। মেয়েটির চুলগুলো অনেক লম্বা।
সেই মেয়েটি হেঁটে যাচ্ছে। আমার কাছে মেয়েটার হাটার চলন ভঙ্গি একটু অদ্ভুত মনে হচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে উনি ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু আমি ওটা তখন আমি খেয়াল করিনি। কেননা আমি তখন বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটছিলাম। কোন কিছু খেয়াল করিনি। আমার একটু ভয় ভয় লাগছে। ভাবলাম অন্ধকার হয়ে আসছে। এদিকেআমি একা সামনের আপুটাকে দেখে একটু সাহস পাই। ভাবলাম উনি ওদিকে যাচ্ছে ওনার সাথে যাই। কিন্তু হঠাৎ দেখি উনি এক পলকেই আমার থেকে বেশ খানিক দূরে চলে গেছে।
আমি ডাকলাম ওই আপু একটু শুনেন উনি আমার কথা শুনছেন না। আমি আবারও ডাক দিলাম আপু আপনি কোথায় যাবেন ? আমিও ওদিকে যাব! প্লিজ একটু দাঁড়ান। কিন্তু উনি আমার কোন কথাই শুনছে না। আমি হাঁটার গতি বাড়াই। আমি যতো দ্রুতই হাঁটছি না কেন, সামনের আপুকে ধরতে পারছি না। হঠাৎ দেখি উনি আমার থেকে অনেকটা দূরে চলে গেছে। আমি একটু অবাক হই। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে একটা মানুষ যেতে পারে!!! তারপর খেয়াল করে দেখি মেয়েটি সেই তাল গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। যে তাল গাছের কথা আমি শুরুতেই বলেছিলাম।
তাল গাছের দিকে তাকিয়ে দেখি সেই আপুটা হাঁটু গারা দিয়ে বসে ঘাসের উপরে দিয়ে দুহাত বোলাচ্ছে। হাত দিয়ে মুখের সাথে মেসেজ করছে। কেন যে এমন করছে বুঝতে পারলাম না। আমি হেটে সামনে এগোচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার নজর তাল গাছের দিকে। তাল গাছে নজর পড়তেই আমার গাও ভার হয়ে যায়। আমার গা শিউরে উঠে। তখন আমার এমন অবস্থা হয়, যে আমি আর পা উঠাতে পারছি না। কোনোভাবেই সামনে এগোতেই পারছি না। এমনকি কথাও বলতে পারছি না। মনে হচ্ছে যেন আমি প্যারালাইজ রোগী হয়ে গেছি। ভীষণ ভয় করছিল তখন।
ওখানে আমি দেখি অনেকগুলো ছোট ছোট বাচ্চা। এক বছর থেকে শুরু করে ৫-৬ বছরের বাচ্চাদের সাইজের হবে। আর সবকটা বাচ্চা ন্যাং,টা উ,ল,ঙ্গ অবস্থায় ওই ছোট ছোট বাচ্চাগুলো গাছে উঠে যাচ্ছে এবং নিচে নামছে!! এটা দেখার পর আমি খুবই অবাক হই। একটি বাচ্চাু দিকে আমি তাকিয়ে ছিলাম। দেখি বাচ্চাটা হা করে আছে এবং ওর মুখ দিয়ে র,ক্ত পরছে। বাচ্চাগুলো যেভাবে সমানে গাছে চড়ছে তাতে মনে হচ্ছে ওদের কিছুই হচ্ছে না। তারপর দেখি ওই মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কি ভয়ংকার এক চেহারা। মেয়েটা ভয়ংকরভাবে হাসতেছে। আমি সেখান থেকে আর এক মুহুর্তের জন্য এগোতে পারছি না। আমার কাছে মনে হচ্ছে হয়তো আজ আমার শেষ দিন। হয়তো আমি মরে যাব। আমি ভয়ে ভয়ে দুরুদ শরীফ পাঠ করতে থাকি। একবার ভেবে দেখুন আমার বয়স মাত্র বারো বছর। আর ওই সময় যদি ভয়ঙ্কর কোনো কিছুর সম্মুখীন হই, তাহলে কি অবস্থা হতে পারে। ভয়ংকার দৃশ্যটা দেখে আমি সেখানেই মূর্তি হয়ে গেছিলাম। আমি না পারছি এগোতে, না পারছি পিছনের দিকে আসতে। আমি দুরুদ শরীফ পাঠ করতে থাকি এবং কি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে থাকি।
সত্যি বলতে কি জানেন আসলেই কোরআনের আয়াতে অনেক শক্তি এবং এটাই সত্য। আল্লাহর প্রতিটা কালিমার অনেক শক্তি সেদিন ঐ দরুদ পড়ার কারণে হয়তো মানুষরূপী দুজন ফেরেস্তা এসেছিল। হয়তো তাদের উছিলায় আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে। তারপর হঠাৎ দেখি দুজন লোক আসতেছে। তাদের দেখে বুঝলাম তারা হয়তো মাটি কাটার কাজ করে। তাদের কাঁধে একটা ঝুড়ি আর একটা কুদাল। দুজনেই কাঁধে দুইটা জুড়ি দুইটা কুদাল নিয়ে তারা বিড়ি খেতে খেতে আমার দিকেই আসছে। 🚭 ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর 🚭 তাদেরকে দেখে আল্লাহ যেন আমাকে বলার শক্তি ফিরিয়ে দিলেন। আমি তাদেরকে ডাক দিয়ে বলি।
এই যে কাকা শুনছেন…? আমাকে একটু নিয়ে যাবেন আমার ভীষণ ভয় করছে। দয়া করে একটু দাঁড়ান। আমাকে সাথে করে নিয়ে চলুন। আমি সামনে যেতে পারছি না। আমার ভীষণ ভয় করছে। লোক দুটো দাঁড়ালো এবং একজন এগিয়ে এসে আমাকে সাথে করে নিয়েও গেল। যেতে যেতেই আমাকে জিজ্ঞেস করে তুমি এই অন্ধকারে এই সন্ধ্যায় এ রাস্তা দিয়ে কেন আসছো? তুমি কি জানো না এই জায়গাটা অনেক ভয়ঙ্কর! সন্ধ্যার পর এই রাস্তা দিয়ে কেউ যাওয়া আসা করেনা। এখানে রাতে অনেক সময় মানুষ মে,রে ফেলে রাখে। আর তুমি একটা মেয়ে মানুষ তবুও ছোট মানুষ। তোমার সাহস হলো কি করে এই রাস্তা দিয়ে আসতে!
তো আমি বললাম আমার ভুল হয়ে গেছে। কাকা প্লিজ আমাকে একটু আমার বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিন।
উনি জিজ্ঞেস করে এই মেয়ে তোমার বাসা কোথায়? জবাবে আমি বলি আঙ্কেল এই যে প্রাচির টা দেখছেন অর্থাৎ ওয়াল (যেটা ইট দিয়ে গাথা হয়) এই প্রাচিরটা পার হলে সামনেই একটা বাগান আছে। আর বাগান পেরোলেই সমানেই আমাদের বাসা। তাই তাড়াতাড়ি যাবো বলেই এই রাস্তা দিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে আমার ভয় লাগছিল। লোকদুটি আমাকে আমার বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যায়। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমি বাসায় তো পৌছালাম। কিন্তু মাকে আমি সমস্ত ঘটনার বেপারে বলি। আমার আম্মু শুনে অনেক ভয় পেয়ে আমাকে ঝার পোজ করে দেয়। পানি পরিয়ে খাওয়াই। তারপর আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম। রাতে কিন্তু ওই দৃশ্যগুলো আমার চোখে ভাসছিল। আমি ভয়ে ঘুমাতে পারছিলাম না। তারপর আমার ভীষণ জ্বর আসছিল। একটানা দিন জরে ভুগছিলাম। সেই ভয়ংকর দৃশ্যটা আমার আজও মনে পরলে গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। এটাই ছিল আমার জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনা।
আমার ঘটনাটি আপনাদের কাছে কেমন লাগলো,তা জানাবেন কিন্তু। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
#ভূতের_গল্প #ভয়ংকর_গল্প #ভূতের_কাহিনী #ভৌতিক_গল্প #ভূতেরগল্প #ভয়ের_গল্প #লেখক_বর্ষা_আক্তের #ভূত #বর্ষা #bgam3 #Horror_story #বাস্তব_ঘটনা #সত্য_ঘটনা