...

গোধূলী বেলার স্মৃতি (Unexpected Story) | পর্ব-২ | Best Bangla Romantic Golpo

গোধূলী_বেলার_স্মৃতি 💞(Unexpected Story)
পর্ব-২
Jannatul  ferdosi rimi (লেখিকা)
|
|
|
Best Bangla Romantic Golpo | খুব রোমান্টিক গল্প | খুব রোমান্টিক গল্প
Romantic Golpo Bangla | ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প
|
|
|
|
রুদ্রিক একের পর এক ওয়াইনের গ্লাস শেষ করছে। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার কাজলের উপরে। রুদ্রিক রাগে গ্লাস চেপে ধরে। যার ফলে রুদ্রিকের হাত বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। তখনি সেখানে নিয়না চলে আসে। নিয়না বলে উঠে,’রুদ্রিক! তোমার হাত থেকে তো রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ‘
রুদ্রিক নিয়নার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বলে,
“আমি আসছি। “
—-“রুদ্রিক তুমি আবার কোথায় যাচ্ছো? তোমার হাত কেটে গেছে। এসো ব্যান্ডেজ করে দেই। “
নিয়নার কথায় রুদ্রিক ওয়াইনের বোতলের ছিপি খুলতে খুলতে বলে-
I ‘ve told you before Niyona . I Don’t like Sniffing at my genes.
(আমি তোমাকে আগেও বলেছি নিয়না। আমার ব্যাপারে নাক গলানো করা আমি মোটেও পছন্দ করিনা।)
কথাটা শুনে নিয়না চুপশে যায়।
অন্যদিকে,
—-“জেসমিন তুমি কী নিজেকে সকলের মতো গাইয়্যা ভাবো? “
কথাটা বলেই নীচে নেমে আসে ইশানি শেখ।পড়নে তার দামি সাদা শাড়ি। তিনি যথেষ্ট স্টাইলিশ। নিজেত স্টাইল নিয়ে তিনি সবসমসয়-ই ‘ সচেতন।ইশানি শেখকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলে জেসমিন শেখ। এখন কত কথা-ই’ শুনতে হবে তাকে।
সিথি বলে উঠে,
—“পিপি (ফুপি)। তুমি মাকে এইভাবে বলছো কেন? “
ইশানি শেখ সিথির দিকে তাঁকিয়ে বলে,
“এই বাড়িতে আমার মুখের উপর কথা আমি পছন্দ করিনা তুমি জানো। “
ইশানি শেখের কথায় সিথি চুপ করে যায়।
জেসমিন শেখ মাথাটা নিচু করেই বলে,
” ইশানি আপা আমি শুধু বলেছি এতো রাতে বাড়ির বাইরে থাকলে, যখন তখন যা ইচ্ছে হতে পারে। আমি সিথির নিরাপত্তার কথা ভেবেই…..
জেসমিনের কথার মাঝে ইশানি শেখ বলে উঠে,
“মেয়ের তো ভালোই খেয়াল রাখো। সে কোথায় যায় বা না যায় সব খেয়াল-ই’ তোমার থাকে। কিন্তু রুদ্রিকের বেলায় এতো অনিহা তোমার। গত তিন রাত ধরে রুদ্রিক বাড়িতে ফিরছে নাহ। সে খেয়াল আছে তোমার? “
জেসমিন শেখ বলে,
“আমি সত্যি জানতাম নাহ। আসলে রুদ্রিকের ঘরে যাওয়ার অনুমতি তো নেই আমার। আমি ভেবেছি হয়তো প্রতিদিনের মতো রাত করে বাড়ি ফিরে, আবার সকাল সকাল চলে গেছে। এমন তো মাঝেই মাঝেই করে রুদ্রিক। “
—-“তোমার এইসব এক্সকিউজ বাদ দাও। আসলে তুমি রুদ্রিকের মা হওয়ার যোগ্যতা-ই ‘ রাখো নাহ। আমাকেই এইবার সব দেখতে হবে।”
কথাটা বলেই ইশানি শেখ নিজের পার্স থেকে ফোন বের করে,কাউকে কল করতে করতে বাইরে চলে গেলেন।
জেসমিন শেখ কেঁদে উঠে। সিথি নিজের মাকে সামলিয়ে নেয়। তখনি দিয়া সেল্ফি নিতে নিতে এসে বলে উঠে,
“ভাবি তুমি এইভাবে কাঁদছো কেন? আপুর কথায়?
আপু তো এইরকম-ই ‘, কেঁদো নাহ। চলো সেল্ফি তুলি। “
সিথি চোখটা ছোট ছোট করে বলে,
“সত্যি দিয়া পিপি তোমার এই সেল্ফির রোগ আর ভালো হবে নাহ। “
দিয়া মুখ বেঁকিয়ে বলে,
” আমি সিংগাল মানুষ ভাই। এসব কান্নাকাটির থেকে সেল্ফি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা ঢের ভালো আমি মনে করি। আর আমার আপার কথা কেউ কানে নিও নাহ। মাথায় সমস্যা আছে। “
দিয়ার কথায় জেসমিন হেঁসেই দিয়ার মাথায় টুকা মেরে বলে,
“আপা এসে শুনলে,তোর খবর আছে। “
দিয়া খুশি হয়ে বলে,
“এইতো ভাবি হেঁসেছে। “
সিথিও হেঁসে দেয়।
আমি কোনোরকম লুকিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম, ছুটকির সাহায্যে। আমি ছুটকির দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলাম,
“সব ঠিক আছে তো? বাবা-মা কোথায়? “
——-” ঘুমাচ্ছে। তুই তো জানিস আপু। বাবা-মা এমনিতেই তোর পর পর বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে বলে অনেক চিন্তায় আছে। তার মধ্যে তুই বাড়ি ফিরছিস না বলে আরো চিন্তা শুরু করে দিয়েছিলো। আমি কোনোরকম বুঝিয়ে শান্ত করেছি। “
ছোট বোনের কথায় আমি কিছুটা শান্ত হলাম। ছোট বেলা থেকে ছুটকি সবসময় আমাকে সবকিছু থেকে আগলে রেখেছে। মাঝে মাঝে তো মনে হয় ছুটকিই আমার বড় বোন।
আমি ছুটকির গালে হাত রেখে বলে উঠলাম,
“তুই এখন ঘুমিয়ে পড়, কালকে তোর কলেজ আছে।”
ছুটকি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো
আমি কাজলরেখা আফরিন। সবাই কাজল বলেই ডাকে। আপতত অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশুনা করছি।
অন্যদিকে ছোট সাহেব অর্থাৎ রাফসিন শেখ রুদ্রিক, শহরের অন্যতম নামকরা বিসনেজম্যান আফজাল শেখের একমাত্র বড় ছেলে এবং ইশানী শেখের আদুরের ভাইপো। বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে। যদিও বড় সাহেব (আফজাল শেখ)ছোট সাহেবকে সাপোর্ট করতে চান না। কিন্তু নিজের ফুপির আস্কারা-ই’ উনার এই অবস্হা। সবসময় একটা মেজাজ নিয়ে থাকে। গার্লফ্রেন্ড তো উনি মাসে মাসে চেঞ্জ করে। সারাদিন নাইট-ক্লাব এইসব নিয়েই উনি থাকেন।
আমি নিজের রুমে ফ্রেশ হয়ে, জানালার কাছে গিয়ে ঘেসে ধারালাম, মনে পড়ে গেলো ২ বছর আগের অতীত।
____________________________________
সবকিছু গুছিয়ে নিলাম। আজ-ই’ যশোর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। মুছে দিবো চট্টগ্রামে আমার সাথে ঘটা সকল স্মৃতি। তখনি ফোন বেজে উঠলো। আমি ফোনের স্ক্রিনে ‘তনয় ভাই ‘ নামটা দেখে আমার বুকটা অজান্তেই ধুক করে উঠলো। কান্না পাচ্ছে প্রচন্ড। ফোনটা ধরার সাহস পাচ্ছি নাহ। মনে হচ্ছে ফোনটা ধরলেই আমি আবারোও দুর্বল হয়ে যাবো। যা এই মুহুর্তে আমি চাইছি নাহ। চোখের জলটুকু মুছে তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে গেলাম নিজের রুম থেকে। সদর দরজার কাছে আসতেই মামি আমাকে জড়িয়ে কেঁদে দিলেন। মামাও চোখের আড়ালে নিজের জলটুকু মুছতে লাগলেন। আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন থেকেই আমি মামা-মামির কাছে এই সিলেটেই বড় হয়েছি। মামা-মামির কোনো সন্তান না থাকায়, আমাকে তারা সবসময় আগলে ধরে বাঁচতে চাইতো।
মামি আমাকে জড়িয়েই বলে উঠে,
“কাজল! থেকে গেলে হয়না?”
মামির কথায় আমি কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠি,
“আমি আর পারছি নাহ মামি। “
মামি কিছু বলবে তার আগেই মামা বলে উঠে,
“কাজল, ঠিক বলছে। তুমি ওকে আটকিয়ো নাহ। “
আমি মামা মামির থেকে বিদায় নিয়ে। সিলেট শহর ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রেখে গেলাম সিলেট শহরে আমার সাথে ঘটে যাওয়া সকল স্মৃতি।
আমার ভাবনার মাঝেই আমি খেয়াল করে কেউ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। কারো নিঃশ্বাস আমার কাঁধে পড়ছে। আমি পিছনে ঘুড়েও বুঝতে পারছি। আমার পিছনে কে আছে। আমি পিছনে না ঘুড়েই বলে উঠলাম,
“ছোটসাহেব! এতো রাতে আপনি কেন এসেছেন।? “
আমার কথায় বোধহয় ছোটসাহেব কিছুটা অবাক হয়েছে। তিনি পিছন থেকেই ধরা গলায় কন্ঠে বলে উঠলেন,
“তুই পিছনে না ঘুড়ে কী করে বুঝে গেলি? আমি এসেছি। “
—–“কিছু জিনিস অনুভব করেও বুঝা যায়। দেখুন নাহ আমিও আপনাকে অনুভব করতে পারি।”
আমার কথায় ছোট সাহেব বলে উঠে,
“তুই কীভাবে অনুভব করিস রে?”
ছোট সাহেবের হাঁসবো নাকি কাঁদবো ঠিক বুঝতে পারছি নাহ। উনি আবারো বলে উঠেন,
“আচ্ছা তুই কী সব বুঝতে পারিস কাজল?
আমার মনে এইসময় তাহলে কী চলছে সেইটাও কি তুই বুঝতে পারছিস? বুঝতে পারলে বল না আমার মনে এখন কী চলছে,আসলে আমি ঠিক বুঝতে পারছি নাহ। “
কথাটা বলেই ছোট সাহেব আমার আরো কাছে এসে ঘেসে দাঁড়ালেন। আমার শরীর কেঁপে উঠলো অদ্ভুদ ভাবে। উনি আমার থেকে অনেকটাই লম্বা, তাই আমার মাথা উনার বুকে গিয়ে ঠেকেছে।
———“কি হলো বলছিস নাহ কেন? তুই কী কিছু বুঝতে পারছিস আমার মনে ঠিক কী চলছে? “
আমি এইবার পিছনে তাঁকিয়ে বলে উঠলাম,
“এতো রাতে আপনি কেনো এসেছেন? আপনি আমার ঘরে তাও এতো রাতে তা কেউ দেখে ফেললে কি হবে বুঝতে পারছেন? সবাই খারাপ চোখে দেখবে। “
উনি কিছুটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
——” তো? রাফসিন শেখ রুদ্রিক কাউকে পরোয়া করেনা। আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি এসেছি, আমাকে কেউ আটকাতে পারেনি আর পারবেও নাহ। আর কে কে ভাবলো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায়না। “
ছোট সাহবের স্পষ্ট কথায় আমি বলে উঠলাম,
——“কিন্তু আমার কিংবা আমার পরিবারের আসে যায়। কেননা আমরা গরীব। আমাদের সমাজে সব দোষ আগে গরীব এবং মেয়েদের-ই ‘ দেওয়া হয়। বড়লোক কিংবা ছেলেদের দোষ দেখা হয় না। “
ছোট সাহেব আমার কথায় অনেকটাই রেগেই বলে উঠলেন,
—-“বুঝেছি আমি এসেছি তোর তো ভালো লাগবে নাহ। সাদি এলে ঠিক তোর ভালো লাগতো। “
কথাটা বলে ছোট সাহেব চলে যেতে নিলে আমি উনার হাত খপ করে ধরে কিছুটা ভিতুস্বরে বলি,
“আপনার হাত কাটলো কীভাবে? “
কাজলের কথায় রুদ্রিকের চোখ নিজের হাতের উপর গেলো। রক্ত শুকিয়ে গেছে একেবার।
—–“আসলে…
উনার কথার মাঝেই আমি উনার হাত ধরে উনাকে আমার বিছানায় বসিয়ে বলে উঠলাম,
“বুঝেছি, রাগের মাথায় হয়েছে এইসব। আপনি একটু বসুন। “
কথাটা বলেই আমি ড্রয়ার থেকে ব্যান্ডিজ বের করে উনার হাতে পরম যত্নে ওষুধ লাগাতে থাকি। রুদ্রিক শুধু কাজলকে দেখে যাচ্ছে।
আমি ছোট সাহেবের হাত ব্যান্ডেজ করতে করতে বলে উঠলাম,
—-“নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে শিখুন। জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। তার রাগ হোক কিংবা দুঃখ। যতক্ষন পর্যন্ত আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন নাহ। ততদিন পর্যন্ত শুধু নিজের সাথে নিজেই হেঁরে যাবেন।”
আমার কথা শুনে ছোট সাহেব আমাকে ছেড়ে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন। আমার হাত এক ঝটকায় ঝাড়া দিয়ে ফেলে। উনি উঠে দাঁড়ান।
—–“তোকে আমাকে এতো জ্ঞান না দিলেও চলবে।”
কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন। আমি উনার যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে রইলাম।
আমি জানি উনার ভিতরে কোনো এক কস্ট লুকিয়ে আছে। তাই উনি এইভাবে বিগড়ে গিয়েছেন।
কিন্তু আমি চাই উনাকে এইবার পরিবর্তন করতে।
উনার কস্টগুলো হয়তো উনি সবাইকে বলতে পারেন নাহ। এই দিক দিয়ে আমাদের দুজনের কিছুটা মিল আছে বটে।
চলবে…..

Leave a Comment

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.