...

ভয়ংকর বাঁশঝাড় | দ্বিতীয় পর্ব | ভূতের গল্প

ভয়ংকর বাঁশঝাড়
দ্বিতীয় পর্ব
#লেখক_আনোয়ার_হোসেন
ফাহিম ভয়ে ভয়ে দোয়া দুরূদ যা জানে তা পড়তে থাকে। একসময় সে বাঁশঝাড় থেকে অনেকটাই দূরে চলে আসে। তবুও তার কাছে সাইকেলটি ভারি মনে হচ্ছে। আর তখনই সে খেয়াল করে রাস্তার সামনে একপাশ থেকে সাব্বির হেটে তার দিকে আসছে। এটা দেখে সে সাব্বিরকে ডাক দেয়। সাব্বির তার কাছে এসে বলতে থাকে কিরে বেটা ইদানিং তাহলে ডুবে ডুবে ভালোই প্রেম করছিস। ফাহিম সাব্বিরের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। সে জিগ্যেস করে তুই এসব কি বলছিস! আমি আবার কবে প্রেমে পরলাম। সাব্বির ফাহিমের কানে কানে বলে প্রেমে না পরলে কি এই রাতের বেলা জেরিনকে সাইকেলে নিয়ে ঘুরছিস! সাব্বিরের মুখে এটা শোনা মাত্রই ফাহিম পেছন ফিরে তাকায়। আর পেছনে ফিরে তাকাতেই সে যা দেখে, তা দেখার পর তার চোখ কপালে উঠে যায়। সে খুবই অবাক হয় সাথে অনেক ভয়ও পায়। কেননা এখন তার সাইকেলের পেছনে জেরিন বসে আছে। ফাহিম তো এটা দেখে ভয় পেয়ে সাইকেল ফেলে সেখান থেকে দৌড়ে পালাতে থাকে। ফাহিমের পিছু পিছু সাব্বিরও দৌড়ায়। তারা কিছুটা দূরে আসার পর পেছন ফিরে তাকালে দেখে সেখানে কেউই নেই। ফাহিম বলে,,,
__দোস্ত ভূত!
__আরে এইমাত্র তো জেরিনকে দেখলাম। মুহুর্তের মধ্যে জেরিন কোথায় চলে গেল?
__আরে বেটা জেরিনের মতো দেখা গেলেও ঐটা জেরিন ছিল না।
__তাহলে কে ছিল?
__আরে এটা ভূত ছিল!
__আরে ফাহিম তুই না এসব ভূতে বিশ্বাস করতি না। এখন হঠাৎই কোথা থেকে তোর মাথায় ভূত চেপে বসলো।
__জানিস না তুই, গত রাতে আমি যখন বাই-সাইকেল চালিয়ে বাঁশঝাড়টি অতিক্রম করছিলাম, তখনই সেখান থেকে কিছু একটা আমার দিকে আসে। তারপর থেকেই আমি বুঝতে পারি সাইকেলের পেছনে কেউ একজন বসে আছে। আর সেটা কি ছিল তা তো নিজের চোখেই দেখেছিস।
__হ্যাঁ তা তো দেখেছি। তবে আমার মাথায় একটা বিষয় কাজ করছে না। বাঁশঝাড়ের ঐ ভূতটা হঠাৎই তোর পিছু নিয়েছে কেন? আর সেটা দেখতে কেন জেরিনের মতোই ছিল!
__জানিনা হঠাৎই ভূতটি কেন আমার সাথে এমনটা করছে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
__তার মানে এতোদিনে লোকমুখে শোনা এই বাঁশঝাড়ে সত্যিই কিছু একটা আছে। যা আমরা দেখেছি। তা এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে সাইকেলটি নিয়ে আয়।
__আমার তো এখন সাইকেলের কাছে যেতেও ভয় করছে। যদি সেই ভূতটি আবারো আসে তাহলে কি হবে!
__আরে চল তো কিছুই হবে না। আমি আছি না!
একথা বলে তারা সাইকেলটি নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে যায়। বাড়িতে ফেরামাত্রই ফাহিমের অনেক জ্বর হয়। সে বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না। পরদিন সকালে ফাহিমের অসুস্থতার খবর শুনে জেরিন ছুটে আসে। কিরে শুনলাম তোর নাকি জ্বর হয়েছে? এখন কেমন নছিস? জবাবে ফাহিম বলে…
__আর বলিস না হঠাৎই জ্বর হয়েছে। এখনো জ্বর কমেনি। তা তুই এসময় এখানে কেন?
__বা আরে আমার সব তো তুই। আর তুই অসুস্থ আছিস জেনেও আমি কি ঘরে বসে থাকতে পারি?
__দেখ জেরিন এসব পাগলামী করবি না বললাম। এসব কথা বাদ দে বললাম।
__তুই কি তোকে ভূলে যেতে বলছিস? দেখ আমি তোকে মন-প্রান দিয়ে ভালোবাসি। তুই কিনা আমাকে এসব বলছিস।
__দেখ জেরিন মা আসার আগেই এখান থেকে চলে যা বলছি।
__যাবো না আমি। তুই কি করবি? আমি তো তোকে দেখতে এখানে এসেছি। প্রিয় মানুষটা অসুস্থ থাকলে কি আর স্বাভাবিক থাকা যায়। তুই হয়তো জানিস না। যখন থেকে তোর অসুস্থতার কথা জেনেছি, তখন থেকে আমার এতো বেশি চিন্তা হচ্ছিল। তোর কথা ভেবে আমার তো রাতে ঠিকমতো ঘুমও হয়নি।
__মা হয়তো আসতেছে। যা এখান থেকে।
__আসুক না তোর মা। আজ উনি আসলে সবই জানতে পারবে। ইস্ জ্বরে তো তোর গা পু*ড়ে যাচ্ছে। একথা বলে সে তার পরনে উড়নার এক প্রান্তে পানিতে ভিজিয়ে ফাহিমের কপালে ধরে।
ফাহিম বলে দেখ আমার কিন্তু এসব ভালো লাগছে না। যা তো এখান থেকে। তখনই সেখানে ফাহিমের মা চলে আসে। আরে জেরিন তুমি এসেছো? জেরিন সালাম দিয়ে বলে আন্টি আপনার ছেলের তো জ্বরে গা পু*ড়ে যাচ্ছে। আমি তার কপালে ভেজা কাপড় রাখতে গেলেই সে রেগে যায়। উনি বলে তা আমার ছেলের জন্য কবে থেকে তোমার এতো দরদ হলো? জেরিন বলে আন্টি আপনি তো সবই জানেন। নতুন করে আপনাকে কি আর বলবো। কিন্তু আপনার ছেলে তো আমাকে দেখতেই পারে না। আন্টি আপনার ছেলের খেয়াল রাখবেন আমি গেলাম। একথা বলেই জেরিন চলে যায়। সেদিন সাব্বির ও রিকসান একসাথে কলেজে যাচ্ছে। তারা বলতে থাকে আজ ফাহিম জ্বরের জন্য কলেজে যেতে পারছে না। জানিস রিকসান, তোকে একটা কথা বলি ভয় পাসনে আবার। রিকসান বলে এখন তো দিনের বেলা, তুই কি বলতে চাস বল।
সাব্বির বলে জানিস, এলাকায় ঐ বাঁশঝাড় নিয়ে আমরা এতোদিন যতো কথা শুনেছি তা সবই সত্য। রিকসান কিছুটা ভেবে বলে তার মানে তুই বলতে চাস বাঁশঝাড়ে সত্যিই ভূত আছে! সাব্বির বলে হ্যাঁ রে এই বাঁশঝাড়ে সত্যিই ভূত আছে। আর সেই ভূতটাকে আমি গতোরাতে দেখেছি। বলিস কি তুই এসব!! বলেই রিকসান চমকে উঠে। তোর কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তো আমি এই রাস্তায় চলাচল করা বন্ধ করে দেবো। তুই আমার অনেক অনেক উপকার করলি। এখন থেকে আমি এই রাস্তায় চলাফেরা করবো না। প্রয়োজন হলে আমি পাশের নদী পার হয়ে যাবো। তবুও এই বাঁশঝাড়ের নিচে যাবো না। এটা বলার জন্য তোকে ধন্যবাদ। সাব্বির বলে আরে বেটা তোকে নিয়ে আর পারা গেল না। মনে হচ্ছে রাতে আমি নয়, বরং তুই ভূত দেখছিস। তোর মতো ভিতুর ঘরে যেই মেয়ে বউ হয়ে আসবে তার কপালে কি আছে কে জানে। আমার তো মনে হয় বিয়ের পর তুই সন্ধা হতেই বউয়ের আঁচল ধরে বসে থাকবি।
দেখ সাব্বির, তুই কিন্তু বেশি বলে ফেলছিস। আজ ভয় পাই বলে এতো কথা শুনতে হচ্ছে। তুই জানিস না আমি বিয়ে করলে সাহসী একটা মেয়েকেই বিয়ে করবো। তারা গল্প করতে করতে কলেজে যায়। এদিকে দুপুরে জেরিন পূনঃরায় ফাহিমের বাড়িতে যায়। পাশে তার মা বসে আছে। জেরিনকে দেখে তার মা বলে, মা তুমি এসেছো? হ্যাঁ আন্টি ফাহিমের এমন দিনে না এসে কি থাকতে পারি। তিনি বলেন ঠিক আছে তোমরা বসে গল্প করো, আমি রান্নার কাজটা শেষ করি। একথা বলেই তিনি সেখান থেকে চলে যায়। ফাহিম তখনো চোখ বন্ধ করে আছে। জেরিন আস্তে আস্তে করে একটা হাত ফাহিমের কপালের কাছে নেয়। তারপর সেখানে স্পর্শ করে। তাতে সে বুঝতে পারে ফাহিমের জ্বর এখনো কমেনি। তখনই ফাহিম চোখ মেলে তাকায়। কিরে জেরিন তুই আবারো। হ্যাঁ আমি এসেছি। তোর এই অবস্থা দেখে আমি কি না এসে থাকতে পারি।
তোর দেখছি জ্বর একটুও কমেনি। মাথায় পানি ঢালবি? ফাহিম বলে না, তুই যা তো এখান থেকে। জেরিন বলে আরে তুই এমন কেন! এতোদিন সুস্থ থাকা অবস্থায় আমার সাথে কেমন আচরন করেছিস। এখন তো অন্তত একটু ভালোভাবে কথা বল। দেখ তোর জন্য আমি তোর পছন্দের পায়েস রান্না করে নিয়ে এসেছি। উঠ পায়েস খেয়ে নে। ফাহিম পায়েসের কথা শুনতেই উঠে বসে। পরক্ষণেই সে বলে তুই রান্না করেছিস পায়েস, আর আমি সেটা খাবো। এটা তুই ভাবলি কিভাবে! তোর পায়েস তুই খা। এখন যা তো এখান থেকে। আমাকে একটু একা থাকতে দে। জেরিন মন খারাপ করে খানিকটা সময় বসে থাকে। যাবো না আমি। তোকে পায়েস না খাইয়ে আজ আমি কোথাও যাচ্ছি না। একথা বলে সে পায়েসের বাটি হাতে নেয়। কিন্তু একটু পরই ফাহিম ঘুমিয়ে পরে। জেরিন পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ততক্ষণে ফাহিমের মা চলে আসে। তিনি এসে বলে কি হলো ফাহিম ঘুমিয়ে পরলো নাকি? হ্যাঁ আন্টি আপনার ছেলে পায়েস না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলো।
ঠিক আছে মা তুমি পায়েসটুকু রেখে যাও। সে ঘুম থেকে উঠলে আমি তাকে পায়েস খাইয়ে দেবো। জেরিন কিছুক্ষণ ফাহিমের দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে যায়। আর বাড়িতে ফিরতেই তার মা জেরিনকে বলতে থাকে, দেখ জেরিন তুই যেভাবে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিস তাতে লোকে কি বলবে? জেরিন রাগে বলতে থাকে দেখো মা লোকের কথায় কান না দিলেই তো পারো। লোকে কি আমাদের ভালো দেখতে পারে নাকি? লোকের কথায় কান দিও না মা। আর এটা জেনে রাখো তোমার মেয়ে জেরিন কোনো ভূল পথে হাটছে না। ঠিক আছে জেরিন এখন যা তো ঘরের কাজগুলো শেষ কর। জেরিন তার মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করে। এদিকে কলেজ ছুটি হলে সাব্বির ও রিকসান বাড়িতে ফিরছে। তারা আজও বাঁশঝাড় নিয়ে আলোচনা করছে। তারা এখনো বাঁশঝাড় থেকে অনেকটাই দূরে আছে। গল্প করার ফাকে রিকসান খেয়াল করে বাঁশঝাড়ের এদিক থেকে সুন্দরী একটি মেয়ে হেটে তাদের দিকেই আসছে।
মেয়েটিকে দেখামাত্রই রিকসান হা করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। সাব্বির রিকসানের অন্যমনস্ক থাকায় খেয়াল করে রাস্তা দিয়ে সুন্দরী একটি মেয়ে হেটে আসছে। এটা দেখে সাব্বির বলে ফেলে দোস্ত মাইয়াটাকে বুঝি তোর পছন্দ হয়েছে? রিকসান মুচকি হাসে। মেয়েটি যতোই তাদের কাছে আসছে, ততোই রিকসান বেখেয়ালি হয়ে উঠছে। সে তো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে চোখের পলক ফেলতে ভূলে গেছে। সাব্বির খেয়াল করে, রিকসান তাকে রেখেই কিছুটা সামনে চলে গিয়েছে। আর সেখানে যেতেই মেয়েটি থেমে যায়। রিকসান এক দৃষ্টিতে মেয়েটিকে দেখছে। ততক্ষণে সাব্বিরও সেখানে চলে যায়। মেয়েটি বলছে আপনারা কি এই এলাকার? সাব্বির কিছু বলার আগেই রিকসান বলে উঠে হ্যাঁ আমি এই এলাকার। আপনার কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে বলতে পারেন। মেয়েটি রিকসানকে উদ্দেশ্য করে বলে আরে আপনি তো দেখতে খুবই সুন্দর। আমার তো আপনাকে খুবই ভালো লেগেছে। রিকসান তো মহাখুশি। সে বলে আপনিও খুবই সুন্দর।
আচ্ছা আপনার নামটা কি? মেয়েটি বলে আমি পারুল। বাহ্ খুব সুন্দর তো আপনার নামটা।
তা কি দরকার বলুন, এই বান্দা আপনার জন্য সবকিছুই করতে রাজি। পারুল বলে আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন? রিকসান বলতে থাকে একবার বলেই তো দেখুন, আমি সাথে সাথে করে দেবো। রিকসানের এরকম কথাবার্তায় সাব্বির অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে পারুলের দিকেও তাকাচ্ছে। তখনই পারুল সাব্বিরকে দেখে চোখ মা’রে। সাব্বিরের কাছে মেয়েটিকে ভালো লেগে যায়। সেও বলতে থাকে আপনি আমার সাথে কথা বলুন। আমি এই গ্রামের ছেলে। বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি। মায়েটি বলে তাহলে তো ভালোই হয়। সে বলে দেখুন আমি শহর থেকে এসেছি। আর আমি একটা কাজের সুবাদে এখানে এসেছি। আমি মূলত বিভিন্ন ফুল নিয়ে রিসার্চ করে থাকি। রিকসান তো বলেই ফেলে আপনার যখন যেসব ফুল লাগবে শুধু আমাকে বলবেন। আমি সাথে সাথে আপনাকে ফুল এনে দেবো।
সাব্বিরও জিজ্ঞেস করে তা আপনি কি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত? জবাবে পারুল বলে আমি এখনো বিয়ে করিনি। আগে তো নিজের হাতে ক্যারিয়ার গড়ে নিই। তারপর ভালো দেখে একটা ছেলে পেলেই বিয়ে করে নেবো। রিকসান বলে আমিও খুব ভালো ছেলে। সাব্বির বলে আমিও খুব ভালো। পারুল বলে তা তো আপনাদের সাথে কথা বলেই বুঝতে পেরেছি। রিকসান জিজ্ঞেস করে তা আপনার কি ফুল লাগবে বলুন। পারুল বলে শহরে তো কম বেশি বিভিন্ন ধরনের ফুল পাওয়া যায়। কিন্তু কিছু ফুল আছে যা শহরে পাওয়া যায় না। তাইতো গ্রামে ছুটে আসা। রিকসান বলে আপনি শুধু একবার বলুন কি ফুল লাগবে। কি ফুল লাগবে আপনার, গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, বেলি,হাসনাহেনা বলুন,,, বলুন। পারুল বলে আরে না না। আমার এসব ফুল লাগবে না। আমার লাগবে বাঁশ ফুল!
রিকসান বলে উঠে আরে এটা কোনো বেপার হলো। বাঁশফুলই ……তো!!! এই কি বললেন আপনি? পারুল হেসে বলে বাঁশফুল লাগবে। রিকসান মনে মনে ভাবে এই মা আমি মনে হয় ফেসে গেলাম। আমার দ্বারা বাঁশফুল এনে দেওয়া সম্ভব হব না। কেননা আমি তো বাঁশঝাড়ের আশেপাশে যেতেও ভয় পাই। সাব্বিরও ভাবনায় পরে যায়। সে বলে দেখুন বাঁশফুল তো আমরা দেখি না। তবুও আপনি যেহেতু বলেছেন। আমি আপনাকে বাঁশফুল এনে দেবো। রিকসান ভাবে প্রেমটা বুঝি তার গেল। এমনিতেও তার এই ভয়ের কারনে কোনো মেয়েই তাকে ভালোবাসে না। শেষে সুন্দরী মেয়েটাকে এভাবে পেয়েও এখন হাতছাড়া করতে হবে। সে কান্না করতে থাকে। পারুল জিজ্ঞেস করে আরে আপনি কান্না করছেন কেন? আপনার আবার কি হয়েছে? রিকসান বলে কি হয়নি তাই বলুন। আপনি বাঁশফুল চেয়েছেন। কিন্তু আমি তো কোনোদিন বাঁশফুল দেখিনি।
পারুল বলে তাই বলে কান্না করা লাগবে। দরকার হলে আপানারা আশেপাশে খুঁজে দেখুন। প্রয়োজনে আমি আপনাদেরকে অনেক টাকা দেবো। সাব্বির বলে না না তা লাগবে না। আমরা টাকার জন্য কিছু করি না। আমি তো চাই..! রিকসান বলে ঠিক আছে আমি বাঁশফুলের খুঁজে বেরিয়ে পরবো। কিন্তু আপনি কোথায় উঠেছেন? আর কার বাড়িতে এসেছেন? পারুল হাত উঁচিয়ে বলে ঐ যে পাশে কয়েকটি বাড়ি দেখছেন। আমি এর পরের বাড়িতে উঠেছি। তবে আমি সেখানে থাকবো না। আমি প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে এসেছি। আমি শুধু ফুলের অপেক্ষাতে আছি। ঠিক আছে আপনারা তাহলে ফুলের খুঁজ করুন। আমি বরং আমার কাজ করি। দুজনেই সেখান থেকে বাড়ির পথে হাটে। দুজনেই একটু পর পর পেছনে তাকিয়ে পারুলকে দেখে। পারুলের সৌন্দর্য তাদের দু্জনকেই কাছে টানছে। যেই না সুন্দর মেয়েটি সেই না সুন্দর তার কথাগুলো। রিকসান বলে ভাই এটা কোনো কথা। দেশে এতো এতো ফুল থাকতে শেষে কিনা বাঁশফুল নিতে বলেছে। আমি তো বাঁশঝাড়ের আশেপাশে যেতেই ভয় পাই।
সাব্বির মনে মনে ভাবে এটা তো ভালোই হলো। রিকসান ভয়ে বাঁশঝাড়ের আশেপাশে যাবে না। আর সেই সুযোগে সে একাই বাঁশঝাড়গুলোতে ফুল খুঁজবে। যেই ভাবা সেই কাজ। বাড়িতে গিয়েই সাব্বির বাঁশফুল খুঁজতে বেরিয়ে পরে। যেভাবেই হোক তাকে বাঁশফুল খুঁজে পেতেই হবে। তা না হলে সুন্দরী মেয়েটা তার হাতছাড়া হয়ে যাবে। ততক্ষণে সন্ধা হয়ে যায়। সাব্বিরের চোখের সামনে সুন্দরী মেয়েটির চেহাখানি ভাসছে। মেয়েটিকে দেখে সে তার প্রেমে পরে গেছে। এখন যেভাবেই হোক বাঁশফুল খুঁজতে হবে। সে প্রথমেই তাদের বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়ে গিয়ে অনেক খুঁজে। কিন্তু সেখানকার বাঁশফুল পায়নি। এদিকে রিকসানও তার এক কাজিনকে সাথে নিয়ে বাঁশফুল খুঁজতে বেরিয়ে যায়। ততক্ষণে চারপাশে অন্ধকারে ছেয়ে যায়। তারা আশেপাশে যতো বাঁশঝাড় ছিল খুঁজতে থাকে। কিন্তু কারো নজরে বাঁশফুল পরছে না। তারা ভাবে যেভাবেই হোক আজ তো বাঁশফুল খুঁজে পেতেই হবে।
অন্যদিকে ফাহিম জ্বর নিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে। এখন সে অনেকটাই সুস্থ অনুভব করে। ফাহিম জেগে উঠতেই দেখে তার পাশের টেবিলে একটা বাটিতে পায়েস রাখা আছে। তখনই তার মনে পরে, সে যখন ঘুমিয়ে ছিল। তার ঠিক আগমুহূর্তে জেরিন তার জন্য পছন্দের পায়েস নিয়ে এসেছিল। আর সে রাগ করে জেরিনকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। এখন সে পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে তৃপ্তির সহকারে সবটা পায়েস খেয়ে নেয়। সে পায়েসটা খাওয়ার পর থেকে নিজের মধ্যে কেমন যেন একটা অনুভূতি টের পায়। মনে হচ্ছে পায়েস খাওয়ার পর তার ভেতরে অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো পায়েস খাওয়ার পর থেকেই জেরিনের প্রতি তার ভালো লাগা কজ করছে। তার কেমন যেন জেরিনকে দেখতে ইচ্ছে করছে। তাই সে ঘর থেকে তার মাকে না বলে জেরিনকে দেখার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।
চলবে…

Leave a Comment

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.