...

Best Bangla Golpo | জাদুর কাঠি | ৪র্থ পর্ব । Vuter Golpo | ভূতের গল্প

জাদুর কাঠি
চতুর্থ পর্ব
#লেখক_আনোয়ার_হোসেন

 

Best Bangla Golpo | জাদুর কাঠি | Vuter Golpo | ভূতের গল্প |

Best Bangla Golpo | জাদুর কাঠি | ৩য় পর্ব । Vuter Golpo | ভূতের গল্প

 

মিলি কিছুই বুঝতে পারছে না, তার সাথে এসব কি ঘটছে। সেদিনের মতো আনোয়ার রিফাতের বাড়ি চলে যায়। সে ভাবে কাল সে যেভাবেই হোক মিলির স্কুলে গিয়ে তার সাথে দেখা করবে। সেদিন রাতে আনোয়ার ও রিফাত পাশের খোলা মাঠের পাশে পরিত্যক্ত ভিটায় বসে গল্প করছে। কিরে রিফাত পরিমিতার জন্য তোর মন খারাপ নাকি? আরে না কি যে বলিস, সে তো আর পরিমিতা নয়। একটা রাক্ষুসীর জন্য মন খারাপ হবে কেন? আনোয়ার বলে জানিস, সেদিন রাতে আমি পরিমিতার এখানে গিয়ে যখন কাওকে সেখানে দেখতে পাইনি। তখন সেখানে আশেপাশে সেই ছেলেটাকে ঘুরতে দেখেছিলাম। যে ছেলেটির লাশ পরদিন সকালে সবাই দেখতে পায়। আমার মনে হয় কি জানিস। সেদিন রাতে তুই সেখানে গেলে হয়তো আজ তুই আমের সামনে দাড়িয়ে থাকতি না।
রিফাত বলে আচ্ছা তোর এই জাদুর কাঠির যখন এতোই শক্তি তাহলে তুই জাদু করে তোর আগের গার্লফ্রেন্ড ময়নাকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়। আরে না,এটা কখনোই সম্ভব না। আমি এখন মিলিকে ভালোবাসি। তাছাড়া যে চলে গেছে, তার কথা আমি মনে করতেও চাই না। তাহলে তুই মিলিকে জাদু করে তোর করে নে। নারে আমি মিলিকে মন থেকে ভালোবাসি। এভাবে জাদু করে কারো মন পাওয়া যায় না। এখন বাদ দে তো এসব কথা। ঠিক আছে এখন চল বাড়ি যায়। বাড়ি ফিরে আনোয়ার রিফাতের রুমে চলে যায়। আর রিফাত পাশের রুমে যায়। রুমে গিয়েই আনোয়ার দেখতে পায় রিফাতের বোন ফাহিমা বসে আছে। সে খুবই অবাক হয়। একি এই রুমে তো কোনোদিনই ফাহিমা আসে না। তাহলে আজ কি মনে ফাহিমা এই রুমে এসেছে! সে আস্তে করে ডাক দেয়,এই যে ফাহিমা তুমি এখানে?
ফাহিমা জবাব দেয় কেন? আমি কি আমার ভাইয়ের রুমে আসতে পারি না? না মানে এর আগে কখনো তোমাকে এই রুমে আসতে দেখিনি তাই বললাম। দেখুন নিজে তো আরেকজনের বাড়িতে থাকেন,এখন আবার আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না। আনোয়ার তার কথা শুনে অবাক হয়। বলে কি মেয়েটা! এই তুমি কিন্তু বেশি বলে ফেললে,আমি বিপদে পরে তোমাদের বাড়িতে উঠেছি। তাই বলে তুমি আমার সাথে এমন বাজে বিহিত করতে পারো না। আপনার লজ্জা করে না,একটা বাড়িতা থাকতে। যে বাড়িতে একটা মেয়ে আছে। আনোয়ার বলে দেখো তোমাকে আমি ছোট বোনের মতো দেখি। এখানে লজ্জার কি হলো। তখনই পেছন থেকে রিফাতের ডাক আসে কিরে আনোয়ার তুই কার সাথে বকবক করছিস? আনোয়ার ঘাড় ঘূরিয়ে বলে আরে বলিস না তোর বোন যা পাকনামী শুরু করেছে না। বলেই সে ফাহিমার দিকে তাকায়,কিন্তু সে দেখে সেখানে ফাহিমা নেই। আনোয়ার খুবই অবাক হয়ে যায়। এটা কি করে সম্ভব। এতোক্ষন তো এখানে ফাহিমা বসে ছিল।
তাহলে এখন সে কোথায় চলে গেল। সে দৌড়ে জানালার কাছে গিয়ে দেখতে থাকে। সেখানে গেলে কাওকে দেখতে পায়নি। বেপারটা সে কাওকে জানায় না। সে বুজতে পারে ফাহিমা এখন তার মায়ের সাথে আছে। ফাহিমা যদি তার মায়ের সাথে থাকে তাহলে এইমাত্র এই রুমে কে ছিল! তার মনের মধ্যে নানা জল্পনা কল্পনা চলতে থাকে। যেভাবেই হোক জানতে হবে কে ছিল। সে রিফাতের সাথে গল্প করতে থাকে। সেদিন সবাই ঘুমিয়ে। হঠাৎই আনোয়ারের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে দেখতে পায় তার রুমে কেউ একজন বসে আছে। সে উঠে দাড়াতেই দেখে কেউ একজন রিফাতের বুকে চেপে তার গলায় ধরে আছে। আর রিফাত বারবার অদ্ভুত এক আওয়াজ করছে। এটা দেখে আনোয়ার খুবই ভয় পেয়ে যায়। সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।

 

Best Bangla Golpo | Bhooter golpo | Horror Story

 

সে দৌড়ে গিয়ে সেই কালো অবয়বটিকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে। তখনই সেই ভয়ানক অবয়বটি তাকে প্রচন্ডভাবে এক ধাক্কায় দেয়ালের সাথে ফেলে দেয়। আনেয়ার প্রচন্ড ব্াথায় কাতরাতে থাকে। তার মুখ দিয়ে র*ক্ত বের হতে থাকে। এটা দেখে আনোয়ার খুবই ভয় পেয়ে যায়। আর দেখতে দেখতে সেই ভয়ানক অবয়বটি রিফাতকে মে*রে ফেলে। এটা দেখে আনোয়ার খুব কষ্ট পায়। তখনই তার জাদুর কাঠির কথা মনে পরে। আর সাথে সাথে সে জাদুর কাঠি বের করে বলতে থাকে শয়তান তুই যেই হস না কেন তোকে আমি ছারবো না। এটা বলেই সে জাদুর কাঠি দিয়ে সজোরে সেই অবয়বটির শরীরে আঘাত করে। কিন্তু সেই জাদুর কাঠিতে কোনো কাজ হয় না। আনোয়ার এতে খুবই অবাক হয়ে যায়। সে ভাবে তার জাদুর কাঠি কাজ করছে না কেন!
তখনই বাহির থেকে রিফাতের গলার আওয়াজ পাওয়া যায়। কিরে আনোয়ার তোর কি হয়েছে? তুই এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করছিস কেন? আনোয়ার দেখে বিছানায় রিফাত নেই সাথে সেই ভয়ানক অবয়বটিও নেই। আনোয়ার রিফাতকে সবকিছু খুলে বলে। কিন্তু এটা রিফাত কিছুতেই বিশ্বাস করেনা। তখন আনোয়ার বলে এই দেখ আমার মুখ দিয়ে র*ক্ত বের হয়েছিল এটা বলতেই সে তাকিয়ে দেখে তার মুখে কোনো র*ক্ত নেই। সবকিছুই একদম স্বাভাবিক। তার মানে এতোক্ষন তার সাথে যা কিছু ঘঠেছে,তা সবই তার ভ্রম ছিল। সে রিফাতকে বলে দোস্ত তুই নিজের খেয়াল রাখিস। সাবধানে থাকবি কিন্তু। রিফাত বলে তোর মতো দোস্ত থাকতে আমার কিসের চিন্তা।
আচ্ছা এখন শুয়ে পর। অনেক ঘুম পাচ্ছে। পরদিন সকালে নাস্তা সেরে আনোয়ার মিলির সাথে দেখা করতে বের হয়ে যায়। আজ সে সরাসরি চলে যায় মিলির স্কুলে। মিলি আজ সুন্দর একটা নীল রঙের পোশাক পড়ে এসেছে। এমনিতেই মিলিকে কতো সুন্দর লাগে। মানে মিলির দিকে তাকালে আর চোখ ফেরানো যায় না। চোখের পলকও পরে না তার। মিলিকে না দেখলে উপলব্ধি করায় যেতো না যে এই পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা মিলিকে কতো সুন্দর করে বানিয়েছেন। মেয়েটার দিকে তাকালে সে মায়ায় পরে যায়। স্কুলের পাশে দাড়িয়ে মিলির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। একসময় মিলি তার বান্ধবীদের সাথে স্কুলে আসে। আনোয়ার ভাবে তাকে দেখে হয়তো মিলি রাগ করতে পারে। তাই সে জাদুর কাঠি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। আর মিলির সাথে সাথে তার ক্লাসে প্রবেশ করে। এতো এতো ছাত্র_ছাত্রীর মধ্যে আনোয়ার যে মিলির সাথে আছে তা কেউই টের পায় নি। বেপারটা আনোয়ারের কাছে বেশ ভালো লাগে। অদৃশ্য হয়ে প্রিয় মানুষের সাথে দেখা করাটা তার কাছে অস্বস্তিকর বেপার হয়ে দাড়িয়েছে। প্রিয় মানুষটার খুবই কাছে আছে,অথচ একটিবারও সে প্রিয় মানুষটা জানলো না সে তার কাছেই আছে। এভাবে আর কতোদিন। মিলির সাথে কথা না বললে ভালো লাগে না।
আনোয়ার জাদু করে একটা গোলাপ ফুল ও চিঠি তার ব্যাগের ভেতর রেখে দেয়। একসময় মিলির স্কুল ছুটি হয়। মিলির সাথে আনোয়ারও হাটতে থাকে। কিন্তু তাকে তো আর মিলি দেখছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিলি বাড়িতে চলে যায়। আর আনোয়ারও রিফাতের বাড়িতে চলে আসে। মনে মনে সে অনেক খুশি। জাদুর কাঠি দিয়ে জাদু করে এখন সে যা ইচ্ছা করতে পারে। প্রিয় মানুষটাকেও যখন তখন দেখতে পারে। তার মাথায় একটা আইডিয়া আসে। সে আগামীকাল মিলির বান্ধবীর রূপ ধারন করে মিলির সাথে তারই স্কুলে যাবে। কিন্তু পরক্ষণেই সে ভাবে না এটা করা যাবে না তাহলে মিলি বিষয়টা সহজেই টের পেয়ে যাবে। সে ভাবে পরেরবার সে স্বাভাবিকভাবেই মিলির সাথে দেখা করবে।
সেদিন সন্ধাবেলা রিফাতের বোন ফাহিমা বসে পড়ছিল। তখনই হঠাৎ ফাহিমার চিৎকার শোনা যায়। রিফাত ও আনোয়ার সহ বাকি সবাই সেখানে দৌড়ে যায়। তারা দেখতে পায়,রিফাতের বোন ফাহিমা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। সে অস্বাভাবিকভাবে হাসতে থাকে। তার মা তাকে ধরতে গেলে ফাহিমা এক ঝাপটায় তার মাকে পাশেই ফেলে দেয়। এটা দেখে রিফাত রেগে যায়,তুই মাকে ফেলে দিয়েছিস। এটা বলে সে ফাহিমাকে থামাতে যায়। তখনি ফাহিমা রিফাতের গলায় ধরে তাকে উঁচু করে রাখে। রিফাত অনেক যন্ত্রনা পাচ্ছে। সে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে। আনোয়ার অবস্থা বুঝে জাদুর কাঠি দিয়ে ফাহিমাকে থামাতে যায়। প্রথমে ফাহিমা থামতে না চাইলেও পরক্ষণেই আনোয়ার জাদুর কাঠির সাহায্য নিয়ে সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
রিফাত বলে বন্ধু আজ তুই না থাকলে কি যে হতো। তুই আমাদের বাঁচালি বন্ধু। তারা কিছুই বুঝতে পারছে না। হঠাৎই ফাহিমার কি হয়ে গিয়েছিল। তবে বেপারটিকে আনোয়ার স্বাভাবিকভাবে নেয় না। সে তার জাদুর কাঠির সাহায্ে দেখার চেষ্টা করে যে আসলে কি ঘঠছে তাদের সাথে। আনোয়ার বিরবির করে তার দিয়ে দিয়ে কি যেন করে। আর কিছুক্ষণের মধ্েই সে বলতে থাকে,রিফাত বন্ধু আমার তোদের বাড়ির উপর কোনো অশুভ শক্তির চোখ পরেছে। রিফাত বলিস কি! এখন উপায়? আনোয়ার জবাবে বলে সে তোদের কারো না কারো কোনো ক্ষতি না করে এখান থেকে যাবে না। যতক্ষণ আমি আছি দোস্ত তোদের কারো কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবো না।

 

Best Bangla Golpo | Vuter Golpo | জাদুর কাঠি

সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে আছে। আনোয়ার দেখতে পায় দরজা খোলে রিফাতের মা ও ফাহিমা তার রুমে চলে এসেছে। আনোয়ার খুবই অবাক হয়,একি আন্টি আপনি। রিফাতের মা রাগান্বিত হয়ে বলতে থাকে বাবা তুমি আর আমাদের বাড়িতে আসবে না। তুমি আজই আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাও।আমরা চাইনা আর তুমি আমাদের এখানে থাকো। আনোয়ার জিগ্যেস করে আন্টি আমি কি কোনো ভূল করে ফেলেছি। যদি অজান্তে কোনো ভূল করে থাকি,তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দেন।
তোমার কোনো কথায় আমি শুনবো না। তুমি এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও। আনোয়ার অনেক অনুনয় বিনয় করার পরও রিফাতের মায়ের মন একটুও গলেনি। আনোয়ার মন খারাপ করে বলতে থাকে অনেক আশা নিয়ে আপনাদের বাসায় এসে উঠেছিলাম। আর আমার মা নেই। আপনাকে নিজের মায়ের মতো দেখেছিলাম। ফাহিমাকে নিজের বোনের চোখে দেখেছি। এরপরেও আমার দোষটা কোথায় সেটাই বুঝতে পারছি না। আর তখনি আনোয়াররের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ও্্্ আচ্ছা তাহলে এতোক্ষন যাবত স্বপ্ন দেখছিলাম। তার পুরো শরীর ঘেমে গেছে। রিফাত জিগ্যেস করে কিরে আনোয়ার তোর কি হয়েছে? আনোয়ার বলে কিছু না রে, আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি।আরে স্বপ্নই তো দেখেছিস,এটা নিয়ে এতো ভাবনার কি হলো। তুই এখন ঘুমা তো।
আনোয়ার মনে মনে ভাাবে সত্যিই কি রিফাতের মা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে? না না এ আমি কি ভাবছি! পরদিন সকালে নাস্তা সেরে আনোয়ার বেরিয়ে পরে মিলির সাথে দেখা করার জন্ ।আজ তার মনটা বেশি ভালো না।ঐ তো সামনেই মিলি হেটে আসছে। মিলির সাথে তার দুজন বান্ধবীও আছে। আনোয়ার কৌশলে দুই বান্ধবীকে যেতে বলে। তারা চলে গেলে সে সরাসরি মিলির সামনে আসে। হায় মিলি কি খবর?এখন তোমার শরীরটা কেমন আছে?তুমি ভালো আছো তো? মিলি কোনো জবাব না দিয়ে হাটতে থাকে।কি হলো মিলি তুমি আমার কথার জবাব দিচ্ছ না কেন? মিলি তুলি কি আমার সাথে রাগ করেছো? মিলি এতোক্ষনে জবাব দেয়, দেখেন আপনি যদি আমার স্কুল যাওয়ার পথে এভাবে বিরক্ত করেন তাহলে কিন্তু আমি সবাইকে ডাকবো।
আরে মিলি তুমি এরকম বলছো কেন? আমি তোমাকে একটা নজর দেখার জন্য এখানে এসেছি। আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি। মিলি বলে তোমার মতো একটা দুষ্চরিত্রবানকে আমি ঘৃনা করি। তুমি আমার সামনে থেকে সরে যাও বলছি। আনোয়ার বলে মিলি তুমি এভাবে বলো না। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি। আর আমি কি এমন করলাম যে তুমি আমাকে এমন বলছো। তুমি সেদিন যা দেখেছিলে সেটা তোমার ভূল ছিল। আমি তেমন লোক নয়। মিলি স্কুলের কাছেই চলে আসে। তুমি যাবে এখান থেকে নাকি লোকজনকে ডাকবো? দূর হও আমার সামনে থেকে। আনোয়ার কিছু বলতে চাইলে মিলি না শুনেই স্কুলে প্রবেশ করে। নিরুপায় হয়ে আনোয়ার রিফাতের বাড়ি ফিরে আসে। আর রিফাতের বাড়ি আসতেই ফাহিমা ও তার মা সামনে এসে দাড়ায়। রিফাতের মা বলে বাবা আনোয়ার তোমাকে আমরা আর এ বাড়িতে থাকতে দিতে পারছি না। তুমি অন্য কোথাও চলে যাও। আনোয়ার খুবই অবাক হয়। সে তো রাতে এসবকিছুই স্বপ্ন দেখেছিল। এখন তা সত্যি হয়ে গেল। সে খুবই মন খারাপ করে।
বিরতি
আপনারা এখন পড়ছেন, ভৌতিক গল্প প্রকাশিত আনোয়ার হোসেন এর লেখা “জাদুর কাঠি” গল্পটি। আমরা নিয়মিত গল্প দিয়ে থাকি। গল্প পোষ্ট করার সময় রাত ঠিক নয়টা। নিয়মিত গল্প পড়তে, ভৌতিক গল্প পেইজটি ফলো করে সাথেই থাকুন। আমাদের পেইজটি সহজেই খুঁজে পেতে ফেইসবুকে bhoutikgolpo51 লিখে সার্চ করুন। তাহলেই পেইজটি পেয়ে যাবেন। আপনি যদি ভৌতিক গল্পে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে পেইজটি ফলো করে সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
তার মানে সে রাতে যা স্বপ্ন দেখেছে,বাস্তবে এখন তা সত্যি ঘটছে। আনোয়ার তখন ফাহিমার মাকে অনেক আকুতি মিনতি করে বলে আন্টি আমি কিছুদিনের মধ্যেই আপনাদের বাড়ি থেকে চলে যাবো। ফাহিমার মা বলে বাবা তা সম্ভব নয়। দেখো ঘরে আমার একটা মেয়ে আছে। সে বড় হয়েছে। তাকে ভালো একটা ঘর দেখে বিয়ে দেওয়া লাগবে। তুমি আমাদের বাড়িতে আছো,এটা সমাজের মানুষ খারাপ ভাবে নিয়েছে। তারা এটাকে নিতিবাচকভাবে নিয়েছে। অনেকে কানাগোষাও শুরু করে দিয়েছে। দেখো বাবা তোমাকে না চাইলেও এখন আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। দেখো ফাহিমা তো বড় হয়েছে,আমি চাইনা ভবিষ্যতে এটা আমার মেয়ের উপর খারাপ প্রভাব পড়ুক।
আর একটা কথা বাবা,আমার মেয়েটা অনেক আদরের। তাকে অনেক কষ্টে বড় করেছি। তুমি যদি চাও আমার মেয়ে ফাহিমাকে বিয়ে করে এখানেই থেকে যেতে পারো। আনোয়ার এটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। একি আন্টি আপনি এসব বলছেন কেন,আমি তো ফাহিমাকে ছোটবোনের মতো করে দেখি। তাকে আমি….? না আমি এটা ভাবতেই পারছি না। আমি অন্য কাওকে ভালোবাসি। ফাহিমার মা বলে তুমি চাইলে আমার মেয়েকে বিয়ে করে এখানে থেকে যেতে পারো। আনোয়ার জবাবে বলে তাহলে আন্টি আমার আর এ বাড়িতে থাকা হলো না।
এই বলে সে রিফাতকে ডাকতে থাকে। রিফাতের সাথে দেখা হলে আনোয়ার বলে,বন্ধু তোদের বাড়িতে আমি আর থাকবো না। আমি কালই তোদের বাড়ি থেকে চলে যাবো। রিফাত কারন জানতে চাইলে আনোয়ার সেটা এড়িয়ে চলে। ঠিক আছে তোর যদি ভালো মনে হয় তাহলে যা। সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে আছে। আনোয়ার জেগে আছে। সে মিলির কথা ভাবছে। মিলি মেয়েটাকে সে এতো বেশি ভালোবাসে,কিন্তু মিলি তো তাকে দেখলেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে। মিলি মন থেকে কখনোই তাকে ভালোবাসেনি। মিলির সৌন্দর্যে আনোয়ার দিশেহারা। এখন সে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে মিলিকে ছাড়া আর কাওকে ভাবতেও পারে না।
আচ্ছা এখন তো আমি জাদুর কাঠি দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। তাহলে আমি জাদু করে মিলিকে আমার করে নিচ্ছি না কেন! না, এটা কখনোই করা যাবে না। আমি মিলিকে ভালোবাসি। তাকে আমি জাদু করে নিজের করে নিতে চাইনা। আমি চাই সে আমাকে মন থেকে ভালোবাসুক। এসব ভাবতে ভাবতে সে কখন যে ঘুমিয়ে পরলো। হঠাৎই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। জেগেই টের পায় রুমে রিফাত নেই। সে রিফাতকে ডাকতে ডাকতে বাহিরে বের হয়ে যায়। আশেপাশে কোথাও রিফাত নেই। আনোয়ার কিছুটা এগিয়ে যায়। কিন্তু কোথাও রিফাত নেই।
হঠাৎই আনোয়ারের চোখ যায় তাদের ঘরের উপড়,এ কি এই মাঝরাতে রিফাত ঘরের চালায় বসে কি করে। কাছে যেতেই সে দেখতে পায়। সেখানে কেউই নেই। সে খুবই অবাক হয়ে যায়। এতো তারাতারি রিফাত কোথায় চলে গেল। ঘরে উঁকি দিতেই দেখতে পায় রিফাত বিছানায় শুয়ে আছে। সে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু সে যে এতোক্ষন সেখানে যাকে দেখেছে সেটা কি ছিল। খানিক বাদেই সে দরজা বন্ধ করে সে শুয়ে পরে। না এভাবে তার সময় কাটে না। তার সময়টা একদমই ভালো কাটছে না। কিছুক্ষণ মৃত মাকে ভেবে কান্না করে। কিছুক্ষণ মিলির কথা ভেবে মন খারাপ করে থাকে। নাহ্ আর ভালো লাগছে না। একবার মিলিকে দেখে আসি।

 

Best Bangla Golpo | Vuter Golpo | জাদুর কাঠি

সে জাদুর কাঠি দিয়ে জাদু করে মুহূর্তে মিলির বাড়িতে পৌছে যায়। মিলির বাড়ির চারপাশে গাছগাছালিতে ভরপুর। হালকা বাতাসে গাছপালা ও ডালপালাগুলো নড়ছে। আকাশে একফালি চাঁদ উকি দিচ্ছে। মিলির বাড়িটা এই মাঝরাতে শোনশান নিরবতা বিরাজ করছে। তাদের বাড়ির উঠোনে একটি কুকুর শুয়ে আছে। কুকুরটি মুহুর্তের মধ্যেই তাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। আনোয়ার ভয় পেয়ে যায়। কুকুরটি না আবার তাকে কামড়ে দেয়। সে পরক্ষণেই জাদু করে কুকুরটিকে শান্ত করে। কিন্তু তারপরও কুকুরটি সজোড়ে ঘেউ ঘেউ করেই চলছে।
বেপার কি এই কুকুরটা এখনো কেন ঘেউ ঘেউ করছে কেন! সে তো জাদু করে কুকুরটিকে চুপ করিয়ে রেখেছে। তারপরেও কুকুরটি এভাবে ঘেউ ঘেউ করে কেন। কুকুরটি পাশেই বড় একটি গাছের দিকে তাকিয়ে সমানে ঘেউ ঘেউ করছে। আনোয়ার সেদিকে তাকাতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়। সে দেখতে পায়,সেই গাছের চূড়ায় বিরাট আকারের কালো একটা ছায়া। আর সেই বিরাট আকারের ছায়া দেখেই কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করছে। আনোয়ার ভয় পেয়ে যায়। সে যতোই জাদু করতে পারুক,তবুও তো সে একজন র*ক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ। ভয় তার মনের মধ্যে গেঁথে বসে।
এটা কি হতে পারে…! কিসের ছায়া এটা। সে ঘরের পাশে গিয়ে লুকায় আর ছায়াটির দিকে দেখতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছায়াটি অদৃশ্য হয়ে যায়। সাথে সাথে কুকুরের ঘেউ ঘেউ বন্ধ হয়ে যায়। কি ছিল এটা! আচ্ছা যাই হোক এখন মিলিকে দেখে আসি। জাদুর কাঠি হাতে পেয়ে আনোয়ার অসম্ভব সব কাজ নিমিষেই করতে পারছে। এখন কোনোকিছুই তার কাজে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে না। সে চাইলে সবই করতে পারে। জানালা দিয়ে উঁকি দিলে ঘরের ভেতরটা ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। মিলিকে তো দেখায় যাচ্ছে না।
তাই আনোয়ার অন্য ভাবে চিন্তা করে। সে ঘরে কিভাবে প্রবেশ করবে সেটাই ভাবতে থাকে। তাই আনোয়ার জাদুর কাঠি দিয়ে জাদুর মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে ছোট একটি জোনাকি পোকা হয়ে জানালার ছোট ফাকা অংশ দিয়ে মিলির ঘরে প্রবেশ করে। ঘরে অন্ধকার থাকায় ভলো করে দেখা যাচ্ছে না। তাই সে জাদু করে পুরো ঘরটা আলোকিত করে তুলে। একা বিছানার এক প্রান্তে মিলি শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। মুখখানা তার মায়া মায়া লাগছে। কিছুক্ষণ সে একপলকে মিলির দিকে তাকািয়ে থাকে।
মিলির সৌন্দর্য তাকে আরো বেশি আকৃষ্ট করে তুলেছে। যেই না সুন্দর দেখতে,সেই না তার চলনভঙ্গী। আস্তে আস্তে সে মিলির মুখের কাছে যায়। কপালের পাশে এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর সে মিলির ঘর থেকে বেরিয়ে পরে। আর রিফাতের বাড়িতে চলে আসে। পরদিন সকালে রিফাত বলে আনোয়ার শোন,তুই কিছু মনে করিস না। তুই এখানে আছিস সেটা আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বুঝিসই তো ঘরে বিয়ে উপযুক্ত একটা বোন আছে। এখন এলাকার নানান জনে নানান কথা বলছে। আমি চাই না আমার আদুরে বোনটির নামে এলাকাবাসী কলংক রটিয়ে বেরাক। সেটা তোর বোন থাকলে তুইও বুঝতি। মা হয়তো তোকে এই বিষয়ে বলেছে। আনোয়ার বলে দেখ রিফাত তোর বোন ফাহিমাকে আমিও নিজের বোনের মতো মনে করেছি। নিজের বোনের চোখে দেখেছি। তারপরও যখন আমাকে নিয়ে এতোকিছু হচ্ছে, ঠিক আছে আমি আজই তোদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তুই এই নিয়ে কোনো চিন্তা করিসনে। আনোয়ার ভাবে আজ তার মা বেঁচে থাকলে হয়তো আজ এভাবে অন্যের বাড়ি ঘুরে ঘুরে বেড়াতে হতো না।
সে রিফাতের বোন ফাহিমাকে ডাকে। ফাহিমা বলে ভাইয়া আমাকে ডেকেছেন? রিফাত জিগ্যেস করে ফাহিমাকে কেন ডাকলি? আনোয়ার বলে বলছি। ফাহিমা এই নাও এই কলমটি তোমার কাছে রেখে দাও। আর এখন থেকে তুমি সবসময়ই এই কলমটি তোমার সাথে রাখবে। যদি কখনো কোনো বিপদের সম্মূখীন হও তবে এই কলমটি হাতে নিয়ে কয়েকবার সৃষ্টিকর্তার নাম যপতে থাকবে। ইনশাআল্লাহ দেখবে তোমার বিপদ কেটে যাবে। ফাহিমা কলমটি নিতে না চাইলে রিফাত তাকে কলমটি রাখতে বলে। কারন রিফাত জানে এটা কোনো সাধারণ কলম নয়। আনোয়ারের দেওয়া কলমটি নিশ্চয়ই অলৌকিকই হবে। ফাহিমা সেখান থেকে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আনোয়ার বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অজানা উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরে।
এ জগতে তাকে কেউ আপন করে নিতে চায় না। তার মা তাকে অনেক আগেই চিরকালের জন্ ছেড়ে পরপারে চলে গিয়েছে। এখন তার বাবা থেকে শুরু করে কেউই তাকে বোঝে না। তাকে আপন করে নেয় না। এই জগতটা আসলেই কেমন যেন,মা মারা যাবার সাথে সাথে সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেল। সে উপলব্ধি করতে পারে এই পৃথিবীতে যার মা আছে সে কতো সুখি মানুষ ও সৌভাগ্যবান। সে হাটতে হাটতে সেই বাচ্চাদের স্কুলের সামনে সেই ছোট্ট ব্রিজের কাছে এসে দাড়ায়। সবকিছুই তার কাছে শূন্য শূন্য লাগছে। এখন সে কোথায় যাবে? কার কাছে আশ্রয় চাইবে। যতোই সে জাদু জানুক,সঠিক ও আপন মানুষদের কাছে না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না।
হঠাৎই সে দেখতে পায় তার মা তাকে বলছে, আনোয়ার…! তুই থেমে গেলি! তোকে থামলে চলবে না। তুই জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চল। তুই তোর বাড়িতে ফিরে যা। ফিরে যা তোর বাবার কাছে। সাথে সাথে তার মা অদৃশ্ হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে এটা তার কল্পনা। সে যেখানেই যাক অন্তত মিলির কাছ থেকে দূরে যাবে না। কারন সে মিলিকে অসম্ভব রকম ভালোবাসে। মিলি সহ তার পুরো পরিবার আনোয়ারকে ঘৃনা করে। তার একটু ভূলের জন্য সবাই তাকে এড়িয়ে চলে। মিলির অন্তত তাকে বোঝা উচিৎ ছিল।
আনোয়ার একটি গাছে হেলান দিয়ে বসে আছে। আজ তার মনটা খুবই খারাপ। সে হঠাৎই সেখানেই ঘুমিয়ে পরে। চোখ খুললে দেখতে পায় রাত হয়ে গেছে। ঘরিতে রাত নয়টা বাজে। এখন সে কোথায় যাবে,কোথায় উঠবে। বাবার কাছে যাবে না। সেখানে তার সৎ মা আছে। সেখানে গেলে তার কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। তাই সে ঠিক করে মিলির বাড়ির কাছাকাছি কোথাও সে থাকবে। হাটতে হাটতে সে মিলির বাড়ির কাছেই চলে আসে। একটা দারুন বুদ্ধি তার মাথায় খেলতে থাকে। আরে সে তো এখন জাদু জানে। যা ইচ্ছে তাই সে করতে পারে।
তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় এখন থেকে সে অদৃশ্য হয়ে মিলির বাড়িতেই থাকবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। সে মুহুর্তের মধ্যেই অদৃশ্ হয়ে মিলির বাড়িতে প্রবেশ করে। মিলির ভাই তপন উঠোনে বসে আছে। এই তপনই একসময় আনোয়ারের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল। তার ভূল বোঝাবোঝির জন্যই আজ এই অবস্থা। সেই কুকুরটিও বাড়ির উঠোনে শুয়ে আছে। মিলি তার রুমে বসে পড়ছে। আনোয়ার কোনোকিছু না ভেবে দ্রুত মিলির রুমে প্রবেশ করে।
মিলির চুল থেকে সুন্দর এক গন্ধ তার নাকে আসে। সে কেবল অদৃশ্য মাত্র কিন্তু তার সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। সে খুশিতে আত্নহারা। এখন থেকে সে মিলির কাছাকাছিই থাকবে। মিলির সামনে গিয়ে দাড়ায়। কিন্তু তখনই আনোয়ার খুবই অবাক হয়। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরে। যাকে সে এতো বেশি ভালোবাসে সেই কিনা আরেকজনকে নিয়ে চিঠি লিখছে। চিঠিতে যা লিখা তা সবই সে পড়ে নেয়। এটা দেখে সে খুবই দুঃখ অনুভব করে। সে কি মিলির জন্য উপযুক্ত নয়। এটা কখনোই সম্ভব নয়। মিলিকে ছাড়া সে বাঁচবে না। মুহুর্তের মধ্যেই সে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে সে দোকান থেকে সিগারেট কিনে সমানে সিগারেট টানতে থাকে।🚭ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর 🚭।
যার জন্য সে এতোদিন অপেক্ষা করছিল সেই কিনা ভালোবাসে আরেকজনকে। সময় তখন রাত দশটা হবে। আনোয়ার মিলির বাড়ির খুব কাছেই দাড়িয়ে,হঠাৎই তার চোখ যায় মিলির বাড়ির পাশে একটি কদম গাছে। সে দেখতে পায় কদম গাছের ডালগুলো সমানে নড়ছে। আর সেখান থেকে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। অদ্ভুত সেই হাসির আওয়াজে আনোয়ার খুবই ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে সে মিলির বাড়ির ভেতর আসলে দেখতে পায় কদম গাছের মগডালে মিলি বসে পা দোলাচ্ছে। এটা দেখে আনোয়ারের চোখ কপালে উঠে যায়। তার সাথে এসব হচ্ছে টা কি!
যবে থেকে সে রিফাতের বাড়িতে গিয়েছিল, সেখানেও নানারকম সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। এখানে আসার পরও সে বিশাল ছায়া দেখতে পায়। আজ কদম গাছের ডালে মিলিকে বসে থাকতে দেখছে। সবকিছু তার কাছে অদ্ভুত লাগছে। আনোয়ার ভাবে দেখি তো রুমে মিলি আছে কিনা! সে ঘরে উকি দিয়ে দেখে মিলি সেখানে নেই। তার মানে মিলি সত্যিই কদম গাছের ডালে বসে আছে। তখনই সে খেয়াল করে বাড়ির সবাই কদম গাছের দিকে তাকিয়ে বারবার বলছে মা মিলি তুই গাছ থেকে নেমে আয়। সাথে বাড়ির কুকুরটিও সজোরে আওয়াজ করে যাচ্ছে।
তার মানে এখন যা ঘটছে সবই সত্যি সত্যি ঘটছে। এটা তার মনের কোনো ভ্রম নয়। তাই আনোয়ার অদৃশ্য হয়ে সেখানে সবার মাঝে উপস্থিত হয়। সেখানে গিয়ে বারবার মিলির নাম ধরে ডাকতে থাকে। মিলি নেমে আসো বলছি। কিন্তু মিলি তার দিকে একবারও ফিরে তাকায়নি। আনোয়ার অনেক চেষ্টার পরেও যখন মিলিকে নিচে নামাতে পারেনি। কখন সে বাধ্ হয়ে গাছে উঠার সিদ্ধান্ত নেয়। গাছে উঠে সে খেয়াল করে মিলি গাছের ডালের একেবারে শেষপ্রান্তে চলে গিয়েছে। এখান থেকে পরে গেলে নির্ঘাত মৃত্ু হবে। আনোয়ার খুবই ভয় পেয়ে যায়।
নিচ থেকে সবাই বলতে থাকে এই মেয়েকে তো জ্বীনে ধরেছে। একে বাঁচাতে হলে জলদি কবিরাজ ডাকো। কেউ জলদি কবিরাজ ডাকো। আনোয়ার অদৃশ্য হয়ে মিলির খুব কাছে চলে আসে। আর তখন সে দেখতে পায় গাছের নিচে সবার সাথে মিলিও দাড়িয়ে আছে। আনোয়ার চমকে যায়। নিচে মিলি দাড়িয়ে আছে,তাহলে গাছের ডালে এখন যে দাড়িয়ে আছে। সেটা কে?এটা ভেবে সেদিকে তাকাতেই দেখতে পায়। সেখানে মিলির পরিবর্তে ভয়ানক একটা মহিলার অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে। সেটা দেখতে এতোটাই ভয়ানক যে তার দিকে দ্বিতীয় বার তাকানোর সাহস হচ্ছে না।
সবাই মিলিকে নিচে দেখতে পেয়ে দৌড়ে ঘরে প্রবেশ করে। সাথে মিলিকেও ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। সবাই উঁকি দিয়ে দেখতে থাকে কদম গাছের সেই সেই ভয়ানক অবয়বটির দিকে। এদিকে অদৃশ্য থাকার ফলে আনোয়ারকে কেউই দেখতে পায় না। ভয়ানক সেই অবয়বটি আনোয়ারেু দিকে ভয়ানকভাবে তাকায়। কি ভয়ানক চোখ দুটো। আনোয়ার জিগ্যেস করে কে তুই? আর এখানে কি করছিস? কে তুই বল? ভয়ানক সেই অবয়বটি আনোয়ারকে কোনো কিছু না বলে তার দিকে আসতে থাকে। আনোয়ার ভাবে এটা কি করে সম্ভব? কেননা সে তো এখন অদৃশ্য হয়ে আছে। তারপরও সেই ভয়ানক অবয়বটি তাকে দেখতে পাচ্ছে। সে কি তবে মিলি ভেবে গাছে উঠে ভূল করেছে। এটা কি তবে একটা ফাদ ছিল। যেখানে মিলিকে বাঁচাতে এসে নিজেই ফেসে গেল।
দেখতে দেখতে ভয়ানক সেই অবয়বটি তার খুব কাছেই চলে আসে। এই অবস্থায় সে কি করবে, কিছুই বুজতে পারছে না। সেই অবয়বটি তাকে কিছু আগেই আনোয়ার সজ্ঞানে জাদুর সাহায্ে সেখান থেকে সরে গাছের নিচে চলে আসে। কোনোরকমে এবারের মতো সে বেঁচে ফিরে। মিলির জন্য আজ তার জীবন চলে যেতো। ভাগ্িস তার কাছে জাদুর কাঠি ছিল। নয়লে আজ তার জীবন এখনেই শেষ হয়ে যেত সেই অশুভ শক্তির কাছে। আনোয়ার ভাবে সে যেভাবেই হোক মিলিকে সবসময় সাহায্য করবে।
পরক্ষণেই সে মিলির পড়ার টেবিলে গিয়ে ছোট একটা কাগজে তার মনের কথা লিখে রাখে। সেখানে স্পস্ট করে লিখে রাখে যদি আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে লেখাটা পড়ে,আরেকটি কাগজে তার উত্তরটা জানান দিও। আর নিচে তার নিজের নাম লিখে রাখে। কিছুক্ষণের মধ্ে মিলি সেখানে আসলে কাগজটি পড়ে মিলি লিখে দেয় আমি এসব প্রেম ভালোবাসার মধ্ে নাই। আমার মা বাবা এসব একেবারেই পছন্দ করে না। এভাবে লিখে মনের ভাষা প্রকাশ করতে আর ভালো লাগছে না। সে বাহিরে জানার কাছে গিয়ে নিজের স্বাভাবিক রূপে ফিরে। আর জানালা দিয়ে মিলিকে আস্তে করে বলে এই মিলি সত্যি করে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা। মিলি জবাব দেয় তোমার চরিত্র সম্পর্কে এতোকিছু জানার পরও আমি তোমাকে ভালোবাসবো?এটা ভাবলে কি করে। আনোয়ার মিলিকে বিস্তারিত বলে। কিন্তু তাতেও মিলি আনোয়ার কথায় সায় দেয় না।

 

Best Bangla Golpo | Vuter Golpo | জাদুর কাঠি

সে বলে বুঝলাম সেদিন তুমি লুকিয়ে আমাদের গোসল করা দেখোনি। তাই বলে আমি তোমাকে ভালোবাসতে যাবো কেন। দেখো আমার মা বাবা এসব একেবারেই পছন্দ করে না। আনোয়ার রেগে যায়,সে জিগ্যেস করে তাহলে তুমি আজ দুপুরে কাগজে কাকে চিঠি লিখেছিলে? মিলি জবাব দেয় তুমি পাগল নাকি,আমি আবার কখন কাকে চিঠি লিখতে গেলাম। যতোসব পাগলামি কথাবার্তা। আনোয়ার বলে হ্যাঁ আমি মনে হয় সত্যিই পাগল হয়ে গেছি। তোমাকে ভালোবেসে আমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছি। আচ্ছা আমি কি তোমার অযোগ্য নাকি? মিলি কোনোকিছু না বলে চুপ করে থাকে।
তখন মিলির মায়ের ডাক পরে। মা একটু এদিকে আয় তো মা। সে তখন আনোয়ারকে বলে শোনো আমাকে মা ডাকছে এখন আমাকে যেতে হবে। তুমিও এখান থেকে চলে যাও। যাও এখান থেকে। আনোয়ার বলে না আমি এখান থেকে যাবো না।ছআর আমার যাওয়ার মতো কোনো জায়গাও নেই। আমি তোমার কাছ থেকে কোথাও যাবো না। দেখো আনোয়ার তোমাকে আমার বাড়ির লোকজন দেখে ফেললে বিপদ হতে পারে। এর আগে তোমাকে কোনো শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল। এইবার তোমাকে যদি আমার ভাই ও বাবা সামনে পায় তাহলে তোমার জন্য খুবই খারাপ হবে। তার আগেই তুমি এখান থেকে চলে যাও। না আমি কোথাও যাবো না। বলেছি তো আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না। মিলি বলে ঐ যে মা আবারো ডাকছে। আমি গেলাম।
মিলিকে তার মা একটা তাবিজ পড়িয়ে দেয়। আর সাথে এটা বলে,মা তোর এখন বিয়ের বয়স হয়েছে। এই সময় তোর সাথে খারাপ কিছু ঘটলে ভবিষ্যতে তোকে নিয়ে আমরা বিপদে পরবো। মা তুই এই তাবিজটি সবসময়ই সাথে রাখবি। সময়কাল ভালো যাচ্ছে না। কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। ঠিক আছে মা আমাকে নিয়ে তুমি ভেবো না। আমি এখন বড় হয়েছি মা। নিজের খেয়ালও ভালোভাবে রাখতে পারি। তারপরও মায়ের তো সন্তানের জন্য চিন্তা থাকবেই। ঠিক আছে মা আমি এখন পড়তে বসলাম। আচ্ছা মা যা পড়তে বস। আনোয়ার তখনও জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে। একি আনোয়ার তুমি এখনো দাড়িয়ে আছো। তারাতারি চলে যাও এখান থেকে। আনোয়ার জিগ্যেস করে তোমার গলায় এটা কিসের তাবিজ? মিলি বলে ঐ তো মা আমাকে এই তাবিজটা পড়িয়ে দিয়েছে। ঐ তো যাতে কারোর খারাপ নজর আমার উপর না পরে। এখন তুমি যাবেন এখান থেকে নাকি আমি মাকে ডাকবো?
আনোয়ার বলে আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন যাচ্ছি। তবে এই কলমটা তুমি সাথে রাখো। বিপদের সময় কলমটা তোমার উপকারে আসতে পারে। মিলি কলম টা নিয়ে টেবিলে ফেলে রাখে। হুহ এটা তো একটা কলম। সেটা আবার তার উপকারে আসবে যত্তসব। আনোয়ার যাওয়ার সময় বলে যায় আমি যাচ্ছি তবে বেশি দূরে নয়। আমি তোমার খুব কাছেই আছি। এটা বলে সে চলে যায়। সে হাটতে হাটতে মিলির রুমের পাশেই অদৃশ্য হয়ে বসে থাকে। আর এভাবেই খানিক সময় কেটে যায়। হঠাৎই তার ঠিক পাশের একটা গাছ থেকে পাখা ঝাপটানোর আওয়াজ শোনা যায়। আনোয়ার চমকে উঠে। কিন্তু না সেখানে কিছুই নেই। তখনি তার চোখ যায় মাটির দিকে।
সে দেখতে পায় মাটিতে বিশাল কিছু একটার ছায়া দেখা যাচ্ছে। ছায়াটা আস্তে আস্তে নড়ছে। আনোয়ার বুঝতে পারছে না এটা কিসের ছায়া। মানুষের মতো হাত পা আছে। কিন্তু গাছে তো কেউই নেই। ভয় পেয়ে সে মিলির ঘরের পাশে গিয়ে দাড়ায়। যতোই অদৃশ্য থাকুক না। সে তো র*ক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ। এখানে থাকতে তার ভয় ভয় লাগছে। সে জাদুর কাঠির সাহায্যে একটা অদৃশ্য তাবু টানিয়ে সেখানে ঘুমিয়ে পরে। পরদিন সকালে সে জানতে পারে মিলিদের বাড়ির উঠোনে কুকুরটি মরে পরে আছে। আনোয়ার ভাবে একটা বোবা নিরিহ কুকুরকে কেউ এভাবে মারতে পারে না। এটা নিশ্চয়ই কোনো!! না! না আমি কি ভাবছি এসব! তখনো সে অদৃশ্য ছিল। তাই সেখানে উপস্থিত কেউই তাকে দেখতে পারেনি।
মিলি স্কুলে যাওয়ার সময় আনোয়ারও তার সাথে সাথে স্কুলের পথে হাটতে থাকে। পথিমধ্যে কয়েকটা বখাটে ছেলের সম্মুখীন হতে হয় তাদেরকে।কিন্তু মিলি তো একা। আজ তার সাথে কোনো বান্ধবীও নেই। মিলি ভাবছে এখন সে কি করবে। এই ছেলেগুলো তো খুবই খারাপ। ছেলেগুলো মিলির পথ আটকে দাড়ায়। আর সে বলতে থাকে আমার পথ থেকে সরে যান বলছি। ছেলেগুলো মিলিকে অকথ্য ভাষায় বিদ্রুপ করতে থাকে। আনোয়ার অদৃশ্য অবস্থায় সবকিছু দেখছে। সে ভাবছে মিলি এই পরিস্থিতিতে কি করতে পারে সেটাই তার দেখার বিষয়।
একটা ছেলে মিলির উড়নায় টান দেয়। মিলি আতকে উঠে। নিজেকে কোনোমতে সামলে নেয়। আরেকজন মিলির একটা হাত ধরে। আর তখনি মিলি সেই ছেলেটার গালে সজোড়ে থাপ্পর বসায়। তাতে ছেলেগুলো আরো রেগে যায়। যাই হোক এই ম*লটার ধেমাক আছে বলতে হয়। এর সাথে আমাদের সময় ভালোই কাটবে। এই ধর একে পাশের জঙ্গলে নিয়ে চল। আজ ওর সব ধেমাক কমিয়ে দেবো। আনোয়ার সবকিছু দেখছে। হঠাৎই মিলি কোনোকিছু না ভেবে আনোয়ারের দেওয়া সেই কলমটা ছেলেদের সামনে ধরে। আর তখনি তার হাতের কলম দেখে সবগুলো ছেলে দৌড়ে পালায়। এটা দেখে মিলিও খুব অবাক হয়। আরে কি আজব। কলম দেখে ছেলেগুলো সব চলে গেল। তখন সে আনোয়ারের কথা ভাবে। কলমটি তো আনোয়ারই সেদিন তাকে দিয়েছিল। যাক ভালোই হলো। কলমটি রেখে দেই।
আবারো মিলি স্কুলের পথে হাটতে থাকে। আনোয়ারও অদৃশ্য হয়ে তার সঙ্গ নিয়ে হাটছে। এভাবে মিলি স্কুলে প্রবেশ করে। আর আনোয়ার তার গতিবিদি লক্ষ করতে থাকে। না মিলি নিজের মতো করে থাকতেই পছন্দ করে।আনোয়ার ভাবে আজ স্কুল ছুটি হলে সে স্বাভাবিক অবস্থায় মিলির সাথে হেটে বাড়ি ফিরবে।
চলবে…

 

Best Bangla Golpo 2024 | জাদুর কাঠি |পর্ব -৫

 

 

More Best Bangla Golpo | Romantic Golpo  | Vuter Golpo 

#ভূতের_গল্প #জাদুর_কাঠি #ভূতেরগল্প #highlightseveryone #foryoupageシ #জাদুর_কাঠি_লিংক #rpambg12 #আনোয়ারহোসেন #ভূতেরভয়ংকরগল্প
#virals #foryou #foryourpage #horrorstory #bhoothfm #bhoot #horror_story #ghost #জাদুর_কাঠি_ভৌতিক_গল্প #viralposts #লেখকআনোয়ারহোসে #viralpage #viralpost

Leave a Comment

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.