...

তুমি আমার প্রিয়তম | পর্ব ৩

তুমি_আমার_প্রিয়তম

পর্ব৩
আফিয়া_আফরোজ_আহি
“ফান্ডামেন্টাল অফ ম্যাথমেটিক্স ” ক্লাস চলছে। আর্শিয়া আর তারিন দুঃখ বিলাসে মগ্ন কারণ কিছুই তাঁদের মাথায় ঢুকছে না। তারিন বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,
“শালার বিয়ে করে সংসার করার বয়সে যদি এই কঠিন কঠিন ম্যাথ করা লাগে তাহলে কি মন চায় বল?সংসার করার বয়সে কি আর পড়ালেখা ভাল্লাগে?
আর্শিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
“তাহলে বিয়ে করে ফেল বাধা দিচ্ছে কে?
“আমার বাপ- মা তো ভুলেও বিয়ের কথা বলেনা। তাঁদের কি চোখে পরে না তাঁদের মেয়ে বড়ো হয়ে যাচ্ছে, তার একটা জামাই দরকার। এখন আমিতো মেয়ে হয়ে বাবা-মার সামনে বলতে পারি না যে আমাকে বিয়ে দাও।
“হটাৎ এত বিয়া বিয়া করতেছিস কেন?”
“আরে ভাই শীতকালে আশেপাশে সবাই বিয়া করতাছে তাইলে আমি বাদ যামু কেন?”
“তুই তোর ভাঙা রেকর্ডার টা বন্ধ করবি না কানের নিচে দিমু?”
তারিন ঠোঁটের ওপর হাত দিয়ে বুঝালো সে আর কিছু বলবে না। কিন্তু হটাৎ সে একটা জিনিস লক্ষ্য করলো লেকচারার আর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে অনেক ক্ষণ। ও আর্শীয়াকে ফিসফিস করে বললো,
“দোস্ত দেখ জিসান স্যার তোর দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে “
“ওনি আমার দিকে তাকাবে কেন। হয়তো অন্য কোথাও তাকিয়ে আছে তুই ভুল ভাবছিস।
“হয়তো আমার মনের ভুল “। বলে দুই জনই ক্লাসে মনোযোগ দিল। পরপর ৩ টা ক্লাস করে হাপিয়ে উঠেছে সবাই তাই ক্লাস শেষ হতেই সবাই ছুটলো ক্যান্টিন এর দিকে।ক্যান্টিনে যাওয়ার সময় আর্শিয়া আরাভকে খুজলো কিন্তু পেলো না। তাই ও আর তারিন চলে গেলো কিছু খেতে খুব খিদে পেয়েছিলো দুইজনেরই।খাওয়া দাওয়া শেষে বের হয়ে দেখলো আরাভ যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানে ওর বেস্টফ্রেন্ড রিয়াজ দাঁড়িয়ে কিছু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আর্শিয়া তাঁদের কাছে গিয়ে রিয়াজ কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এক্সকিউজ মি ভাইয়া একটু এদিকে আসবেন?কথা ছিলো।”
রিয়াজ অবাক হয়ে ভাবছে এই মেয়ে কাল থেকে আরাভ এর পিছনে ঘুরছিলো হটাৎ তাকে কেন ডাকছে।তার ভাবনার মাঝে আর্শিয়া আবার ডাকলো তাই আর না ভেবে আর্শিয়াদের কাছে এলো।
“আমাকে কি দরকার বলো?”
“আপনার বন্ধুর নাম্বার টা দেন “
“আরাভের নাম্বার তোমাকে দিবো কেন? আর ওর নম্বর দিয়ে তুমি কি করবা?”
“আপনার বন্ধুর সাথে প্রেম করবো। তাড়াতাড়ি নাম্বার টা দিন তো।”
“ওর পারমিশন ছাড়া ওর নাম্বার কাউকে না দেয়ারে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই আমি দুখিত। আমি ওর নাম্বার টা দিতে পারবো না।”
“ওকে, সমস্যা নাই।কিন্তু আপনার গার্লফ্রেন্ড নিশির নাম্বার যদি আমি পাবলিকদের দেই সেটা কি আপনার ভালো লাগবে, বলুন।
এই কথা শুনে রিয়াজ ঘাবড়ানো কণ্ঠে বললো, “আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই “
“আপনি কি সিওর যে আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই। ওকে আমি নিশিকে বলে দিবো সে যেন আপনার সাথে ব্রেকাপ করে নেয়।”
“তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছে “
“আর্শিয়া ভয় দেখায় না।আর্শিয়া কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী।”
“ওয়েট” বলে আর্শিয়া নিশির নাম্বার উঠিয়ে কল দিয়ে রিয়াজের সামনে ধরলো।রিয়াজ ভয় পেয়ে বলল,
“আরে কিউট আপু আমাদের মাঝে নিশিকে আনো কেন।আমি তো তোমাকে আরাভের নাম্বার দিচ্ছিলাম।জাস্ট একটু মজা করলাম তোমার সাথে।
আর্শিয়া মনে মনে বলে এবার তুমি লাইনে এসেছো বাছা।তারপর রিয়াজের কাছ থেকে আরাভের নাম্বার নিয়ে আর্শিয়া আর তারিন ক্লাসে চলে গেলো।ক্লাসে গিয়ে তারিন জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে তুই রিয়াজ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার কই পাইলি “
“আমার কাজিন এর নাম্বার আমার কাছে থাকবে নাতো তোর কাছে থাকবে?”
“নিশি আপু তোর কাজিন?”
“হুম,আমার খালাতো বোন “
“তা তুই আরাভ ভাইয়ার নাম্বার দিয়ে কি করবি??”
এবার আর্শিয়ার মাথা গরম হয়ে গেলো এক প্রশ্নের উত্তর আর কতো বার দিবে।তাই তারিনকে ধমক দিয়ে বললো,
“প্রেম করবো। একবার বলছি শুনিস নাই।”
“সত্যিই তুই প্রেম করবি,তাও এবার আরাভ ভাইয়ার সাথে।”
“মিথ্যা মিথ্যা কাউকে প্রেম করতে দেখছিস।”
এর মধ্যেই ক্লাসে লেকচারার চলে এসেছে।তাই কেউ আর কথা বললো না।ক্লাসে মনোযোগ দিল।ক্লাস শেষে আর্শিয়া আর তারিন ক্লাস থেকে বের হলো লাইব্রেরীতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। লাইব্রেরীতে গিয়ে আর্শিয়া আর তারিন নিজেদের পছন্দ মতো বই নিয়ে কর্নারের একটা টেবিলে বসে পড়লো।দুইজন দুইজনের মতো করে পড়ছে।হটাৎ একটা পুরুষালি কণ্ঠে দুইজন বই থেকে মুখতুলে দেখলো তাঁদের সামনে লেকচারার জিসান দাঁড়িয়ে আছে। তারা কিছু বোঝার আগে জিসান আবার বলে উঠল,
“আমি কি তোমাদের সাথে বসতে পারি “
আর্শিয়া আর তারিন ভ্যাবলাকান্তের মতো একজন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“অবশ্যই, বসুন স্যার “
জিসান আর্শিয়ার পাশে বসে পড়লো।আর্শিয়া আর তারিন দুইজনই অনেক অবাক হলো।আর্শিয়া আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো লাইব্রেরীতে থাকা অনেকেই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারিনের দিকে তাকিয়ে দেখল তারিন তাকে ইশারা করছে উঠে যাওয়ার জন্য। সেও ইশারায় বুঝালো একজন লেকচারারের সামনে থেকে কিভাবে উঠে যাবে।এতে স্যার যদি কিছু মনে করে।দুইজন দুইজনের দিকে ইশারা করে হটাৎ উঠে দাঁড়ালো। তাঁদের উঠতে দেখে জিসান জিজ্ঞেস করলো,
“তোমরা দুইজন উঠে পড়লে যে “
আর্শিয়া কিছু বলার আগে তারিন বলে উঠলো আমাদের বাসায় যেতে হবে স্যার।দেরি হয়ে যাচ্ছে। আজ তাই আসি “বলে সালাম দিয়ে আর্শিয়ার হাত ধরে হাঁটা দিল।গেটের বাহিরে এসে হাত ছেড়ে দুইজনই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এরমধ্যেই তারিন বলে উঠলো,
“দেখছিস আমি বলছিলাম না স্যার তোর তাকিয়ে থাকে। একটু আগে তো তোর পাশে এসেও বসলো। আমার মনে হয় স্যার তোকে পছন্দ করে।”
“বাজে কথা বলবি না। তার মন চাইছে তাই বসছে। আমি এই বেপারে আর কিছু শুনতে চাই না।”
অতঃপর দুইজন দুইজনের থেকে বিদায় নিয়ে যার যার বাসায় চলে আসে। আর্শিয়া বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। তারপর কাঁধের ব্যাগ রেখে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসল। নিচে গিয়ে দেখে তার মামনি আর রুশা মিলে রান্না করছে আর আরুশ টিভিতে কার্টুন দেখছে। সেও বসে পরে আরুশ এর সাথে। কিছুক্ষন পর খাবারের জন্যই ডাক দিলে খেয়ে ঘরে গিয়ে ঘুম দেয়। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে আরুশ এর সাথে খেলতে থাকে এর মধ্যে কলিংবেল বেজে উঠে। দরজা খুলে দেখে তার বাবা আর ভাইয়া চলে আসে।সে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
“মা আমি তো মাত্র অফিস থেকে আসলাম ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর তোমার সাথে কথা বলবো “বলে আর্শিয়ার কপলে চুমু দিয়ে ঘরে চলে যায়। আর্শীয়াও তার বাবার পিছু পিছু নিজের রুমে গিয়ে কিছুক্ষন ফোন চালায়। ডিনার এর জন্য ডাক পড়তেই নিচে গিয়ে টেবিলে বাবার পাশে বসে পরে।
খাওয়ার মাঝে হটাৎ তার বাবা বলে উঠো,
“মা তোমাকে কিছু বলার ছিলো “
“বলো বাবা কি বলবে।”
“আসলে আমাদের নেক্সট প্রজেক্ট এর কাজ একটু বেশি যা আরিশ একা করতে পারবে না। তাই আমি ভাবছি তুমি যদি ওকে হেল্প করতে তাহলে ভালো হতো।”
“ওকে বাবা, সমস্যা নেই। যদিও আমি এত তাড়াতাড়ি অফিসের কাজে নিজেকে জড়াতে চাইনি। কিন্তু তুমি যেহেতু বলছো তাই আমি ভাইয়ার সাথে কাজ করবো”
খাওয়ার সময় কেউ আর কথা বললো না। খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে গেলো। আর্শিয়া রুমে এসে ভাবলো আরাভ কে কল দিবে তাই যেই ভাবা সেই কাজ।আর্শিয়া আরাভকে কল দিল।প্রথমবার রিসিভ হলো না তাই আবার দিল।তৃতীয় বারের সময় আরাভ রিসিভ করে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“কে বলছেন “
“আমি তোমার জান বলছি”
“এই মেয়ে কে আপনি আর রাত বিরেতে কল দিয়ে কি ফাইজলামি শুরু করেছেন।আপনার নাম বলুন “
“আমি আর্শিয়া বলছি।তা জানেমান কি করছিলেন আপনি?”
“আমি কি করছি না করছি তা তোমাকে বলবো কেন? আর তুমি আমার নাম্বার কথায় পেলে?”
“যেখান থেকেই পাই।বলুন কি করছিলেন?”
“বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রেমিকার কথা ভাবছি”
“আমার জানা মতে আপনার কোনো প্রেমিকা নেই।আর যদি থেকেও থাকে ব্রেকাপ করে ফেলুন।কারণ আপনার জীবনে একজন নারীই থাকবে যাকে আপনি ভালোবাসবেন, যার কথা আপনি সারাদিন ভাববেন আর তার নাম হলে আর্শিয়া।”
“তুমি কি আমাকে অর্ডার করছো।তোমার সাহস তো কম না মেয়ে।”
“হুম, আমি আপনাকে অর্ডার করছি।এখন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন।আল্লাহ হাফেজ।”
বলে আর্শিয়া কল কেটে লাইট বন্ধ করে ঘুমের দেশে পারি দিল।অপরদিকে আরাভ ভাবছে মেয়েটার সাহস কতো আরিয়ান খান আরাভকে অর্ডার করে।আর সেও এই মেয়েকে কিছু বলতে পারে না। কিন্তু কেন কিছু বলতে পারে না ভাবতে ভাবতে আরাভ ও ঘুমিয়ে গেলো।

Leave a Comment

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.