...

তুমি আমার প্রিয়তম | পর্ব ২ | Bangla Romantic Golpo

তুমি_আমার_প্রিয়তম
পর্ব২
আফিয়া_আফরোজ_আহি
রোমান্টিক গল্প | ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প | বেস্ট রোমান্টিক গল্প | নতুন রোমান্টিক গল্প | খুব রোমান্টিক গল্প | romantic golpo bangla | romantic golpo | bangla romantic story
Romantic Golpo Bangla | ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প
“হেই মিস্টার ,উইল ইউ বি ব্রাদার ইন-ল অফ মাই সিস্টার “
“হোয়াট”
পুরো ভার্সিটি ক্যাম্পাস স্বতঃব্ধ।নেই কোনো কোলাহল যেন এখানে সবে মাত্র কোনো বোম ব্লাস্ট হলো।
“সকালের একফালি মিষ্টি রোদ পর্দার ফাঁকা দিয়ে উঁকি ঝুকি দিচ্ছে। চারিদিকে নতুন দিনের আমেজ। তাতে কি? আর্শিয়া নামক রমণী নিদ্রা বিলাসে মগ্ন। পাশে রাখা ঘড়ি ও মুঠো ফোনটি জানান দিচ্ছে নিদ্রা ভঙ্গের প্রহর ঘনিয়ে এসেছে। আর্শিয়ার পাশে রাখা ফোনটি পঞ্চম বারের মতো সুর তুলে জানান দিল তাকে কেউ স্মরণ করছে। কিন্তু সে ঘুমে এতটাই মত্ত যে ফোন রিসিভ করার মতো সময় তার নেই।এখন তার সময় শুধু এবং শুধু ঘুমানোর জন্য। সকাল ৮টা বাজে। আলেয়া বেগম ঘরে এলেন আর্শিয়াকে ঘুম থেকে তোলার জন্য। সে বার বার ডাকছে কিন্তু ফলাফল শুন্য। আলেয়া বেগম মাঝে মাঝে ভাবেন এই মেয়ে নিঃঘাত কুম্ভকর্নের ফিমেল ভার্সন। নাহলে একটা স্বাভাবিক মানুষ এত গভীর ঘুমে কিভাবে ঘুমায়। একেতো তুলে নিয়ে গেলেও টের পাবে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই এবার একটানে আর্শিয়াকে উঠিয়ে বসালো। এভাবে উঠানো তে আর্শিয়া বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
“মামনি আরেকটু ঘুমাতে দাও না।এরকম কেন করছো?”
“হ্যা, তুই আরো ঘুমাতে থাক ঐদিক দিয়ে ক্লাস শুরু হয়ে যাক।”
“কয়টা বাজে?
“৮ টা ২০ বাজে। তোর ক্লাস না ১০ টা থেকে শুরু।
“হুম “বলে আর্শিয়া ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে চলে গেল। আলেয়া বেগম ওর বিছানা গুছিয়ে যেতে যেতে বললো তৈরি হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আয় তোর বাবা আর ভাইয়া বসে আছে একসাথে নাস্তা করবে তাই। বলে চলে গেলেন।আর্শিয়া তৈরি হয়ে নিচে যেয়ে দেখে সোফায় বসে তার বাবা খবরের কাগজ পড়ছে আর ভাইয়া আরুশ কে নিয়ে খেলা করছে। সবাইকে “গুডমর্নিং ” বলে টেবিলে বসল।প্রতি উত্তরে ভাইয়া ও বাবা একসাথে “গুডমর্নিং ” বলল।আর্শিয়া বসতেই তার বাবাও চলে এলো।
“ঘুম কেমন হলো আমার মায়ের?”
“অনেক ভালো হয়েছে বাবা।
পাশে থেকে আরিশ ঠাট্টা করে বলে উঠলো,
“বাবাই কুম্ভকর্ণদের ঘুম সব সময় ভালোই হয় “
“ভাইয়া তুমি কিন্তু উল্টা পাল্টা কথা বলছো। আমি মোটেও কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাই না।”
“এই জন্যই বলে সত্য কথার ভাত নাই। আর তুই কুম্ভকর্ণ কিনা এটা সবাই জানে। তাই নিজের হয়ে সাফাই গাইতে হবে না।”
এমন সময় রান্নাঘর থেকে মামনি ধমকে বলে উঠলো,
“তোরা দুই ভাইবোন ঝগড়া থামিয়ে খাবি নাকি আমি আসবো।
তাই দুই ভাইবোন চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
আর্শিয়া খাচ্ছে আর আরিশ এর কোলে বসা আরুশ এর সাথে দুষ্টামি করছে। আবার মাঝে মাঝে ওকে খাইয়েও দিচ্ছে। খাওয়া শেষে দুই ভাইবোন সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলো। আরিশ এখন আর্শীয়াকে ভার্সিটি তে দিয়ে তারপর অফিসে যাবে এটা তার প্রতিদিন এর রুটিন।ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামতে আর্শিয়া নেমে আরিশকে বিদায় দিয়ে ভার্সিটির গেটের দিকে হাঁটা দিল। গেট দিয়ে ঢোকা মাত্র কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরে পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে দিল। থাপ্পড় দেওয়া ব্যক্তি এবার বলে উঠলো,
“শালী পেত্নী সকালে পাঁচ বার ফোন দিলাম রিসিভ করলি না কেন?”
আর্শিয়া জড়িয়ে ধরা ব্যক্তিকে সামনে এনে দেখল, এ আর কেউ নয় তারই বেস্টি তারিন। সে তারিনকে পাল্টা থাপ্পড় দিয়ে বলল,
“ওই তুই আমার কোন বোনরে বিয়া করছোছ, যে তুই আমারে শালী বললি ।আস্তাগফিরুল্লাহ,দোস্ত তুই কি শরিফা থেকে শরীফে রূপান্তরিত হয়েছিস?দূরে যা আমার থেকেই।
“এক থাপ্পড় দিয়া বয়রা বানায় দিমু। আমি মনে প্রাণে একজন মেয়ে।আমার কতদিনের ইচ্ছা একটা সুন্দর দেইখা পোলা বিয়া কইরা সংসার করমু, আর তুই এইগুলি কি বলছ।”
“তুই যদি মেয়ে হয়ে থাকছ তাহলে আমারে শালী বললি কেন??”
“তোরে শালী বলমু নাতো কি ফুল চন্দন দিয়ে পূজা করমু। সকাল থেকে কতো বার ফোন দিতাছি কিন্তু তুই ধরোছ না।কি হইছিলো তোর, ফোন ধরোছ নাই কেন?”
“তুই তো জানোছ ইয়ারর আমি ঘুমাইলে কিছুই টের পাই না। তাই আমি ঘুমাইলে হাজার বার ফোন দিলেও আমারে পাবি না।”
“এইজন্যই সবাই তোরে কুম্ভকর্ণের লেডি ভার্সন বলে। তা তোরে আজকে কে দিয়া গেলো??
“কে আবার আরিশ ভাইয়া।”
“সত্যি দোস্ত, আমার বিবাহিত ক্রাশ তোরে দিয়া গেলো আর তুই আমার সাথে তার কথা বলাই দিলি না। তুই তো মীরজাফরের থেকেও বেঈমান।”
“ভাইয়া তোর মতো আজাইরা বইসা থাকে না। ভাইয়ার অনেক কাজ আছে। বাবা তো এখন অফিসে বেশি যায় না তাই ভাইয়ার ওপর অনেক বেশি প্রেসার পরে।”
“ওহ তাইলে আর কি করার। দোস্ত মনে পড়ছে তোরে একটা কথা বলার ছিলো, তুই শুনছিস কালকে নাকি একটা মেয়ে ভিপিরে প্রপোজ করছে। আমার না অনেক শখ মেয়েটারে দেখার। কার এত সাহস যে কিনা আরিয়ান খান আরাভ কে প্রপোজ করলো। যেখানে সব মেয়েরা তাকে পছন্দ করলেও সামনে যাওয়ার সাহস পায় না সেখানে একটা মেয়ে তাকে সরাসরি প্রপোজ করে দিল। হাউ?কিন্তু মেয়েটার সাহস আছে বলতে হবে।”
“সেই সাহসী মেয়েটা আমি। নে এবার আমাকে দেখে তোর শখ পূরণ কর।”
“দোস্ত তুইই, সিরিয়াসলি?তুই করলি প্রপোজ বিশ্বাস হয় না।”
“হুম আমি।বিশ্বাস না হইলে আমার সাথে চল তোরে বিশ্বাস করাই। বলে তারিন এর হাত ধরে আর্শিয়া মাঠের দিকে হাঁটা দিল আর চারদিকে চোখ বুলিয়ে আরাভ কে খুঁজছে।হটাৎ চোখ আটকে গেলো আকাশি শার্ট যার উপরের দুইটা বোতাম খোলা ,কালো প্যান্ট, শার্টের সাথে কালো সানগ্লাস ঝুলানো,গালে চাপ দাঁড়ি একগাল হাসি দিয়ে ফ্রেন্ডসদের সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে।আর্শিয়ার ইচ্ছে হলো বুকের বা পাশে হাত দিয়ে, “হায় মেয় মারজাভা” বলতে। আপাদত ইচ্ছে টাকে মনের মধ্যে রেখে আরাভ এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
“গুডমর্নিং জানেমান। হাউ আর ইউ??”
আরাভ ফ্রেন্ডস প্লাস কিছুই ছোটো ভাই ব্রাদার্সদের সাথে কথা বলছিলো। হটাৎ একটা মেয়ের গলার স্বর শুনে পাশে তাকিয়ে দেখলো দুইটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একজন হলদে ফর্সা, হাইট ৫ফিট ৩ কি ৪ ইঞ্চি হবে। আরেকজন একটু শ্যামলা হাইট ৫ফিট ১ ইঞ্চি হবে। ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কাকে বলছো “
“তোমাকে বলছি।”
“আমাকে চেনো তুমি?? আমি তো তোমাকে চিনি না। আর কথা বলার সময় সামলে কথা বলবে ।
“ওমা তোমার মনে নেই আমি কে?সবাই বলে তুমি অনেক ব্রিলিয়ান্ট তাহলে আমায় এত তাড়াতাড়ি কিভাবে ভুলে গেলে। আমিই বলছি আমি কে। গতকাল যে মেয়ে তোমাকে সবার সামনে প্রপোজ করেছে আমি সে।
আরাভ ভালো করে তাকিয়ে দেখলো আসলেই তো এটা তো সেই অসভ্য মেয়েটা কাল মাস্ক পড়া ছিলো বলে চিনতে পারেনি।হলদে ফর্সা গোলাগাল চেহারা, ঠোঁটের নিচে মাঝ বরাবর একটা তিল, মায়া ভরা চোখ যা অনেক আকর্ষণীয়। এক দেখায় যে কেউ মাশাআল্লাহ বলবে। আরাভ বেশিক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকালো না চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো,
“সমস্যা কি??”
“আমার একমাত্র সমস্যা তো তুমি। খেতে, ঘুমাতে, চোখ বন্ধ করলে আমি যে শুধু তোমাকেই দেখি।
আরাভ ধমকে বলে উঠলো,
“একটা থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো বেয়াদব মেয়ে।আর আমার হাতের একটা থাপ্পড় খেলে চোখে শুধু অন্ধকারই দেখবা।”
“এই আমাকে একদম ধমকাবা না। গাল লাল করবা ভালো কথা থাপ্পড় দিয়ে না করে অন্য ভাবে করো আমার তাতে সমস্যা নাই।”বলে দুস্টু হসে চোখ টিপ দিল।
আরাভ ভ্যাবাচ্যাকা বললো,
” মানে”
আর্শিয়া আরাভের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“তুমি ভালোবাসে কিস দিয়েও দেখবা গাল অটোমেটিকলি লাল হয়ে যাবে।”
“ডিসগাস্টিং “বলে আরাভ সেখান থেকে চলে গেলো।আর্শিয়া ও তারিন কে নিয়ে ক্লাস এ গেলো।তারিন এতক্ষন অবাক হয়ে আর্শীয়াকে দেখছিলো যেই মেয়ে তার আশেপাশে কোনো ছেলেকে ঘেঁষতে দেয়নি। কেউ প্রপোজ করলে ইচ্ছা মতো মাইর দিতো সেই ভয়ে কেউ ওকে প্রপোজ ও করার সাহস করে না।তার প্রমান সরূপ একটা ঘটনা আছে, ক্লাস ফাইভ এ থাকতে ওদেরই এক ক্লাসমেট আর্শিয়াকে “আই লাভ ইউ “বলেছিলো।পাক্কা আধা ঘণ্টা আর্শিয়া ওই ছেলেটাকে মেরেছিলো। পরে সবাই মিলো ওকে থামিয়ে ছিলো। এই বিষয় টা নিয়ে ছেলের বাবা-মা ঝামেলা করতে চেয়েছিল কিন্তু প্রিন্সিপাল এর জন্য করতে পারে নি।আর আজ সেই মেয়ে রীতিমতো একটা ছেলেকে বিরক্ত করলো।তারিন কিছুই বলবে তার আগে ক্লাসে লেকচারার চলে আসায় আর কিছুই বলা হলো না।দুইজনই ক্লাসে মনো যোগ দিল।

তুমি আমার প্রিয়তম | পর্ব – ৩

Leave a Comment

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.