...

Best Bangla Golpo 2024 | জাদুর কাঠি | Vuter Golpo | ভূতের গল্প | প্রথম পর্ব

বাচ্চাদের স্কুলটা সবেমাত্র ছুটি হয়েছে। সব বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করে স্কুল থেকে বের হচ্ছে। রাস্তার ধূলাবালি উড়ে চারপাশে ধূসর হয়ে যাচ্ছে। তার ঠিক পাশেই একটি ছেলে গাছের গোড়ায় বসে আছে। যে মনের সুখে সিগারেট টানছে। 🚭ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর 🚭। ছেলেটির নাম আনোয়ার। আজ তার মন খারাপ। অবশেষে তার গার্লফ্রেন্ডও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সেই সুখে সে লাগাতার সে সিগারেট টানছে। 🚭 ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর 🚭। কদিন আগে তার মা মারা গেল,শেষমেশ তার গার্লফ্রেন্ডও তাকে ছেড়ে চলে গেল। আনোয়ারের মাঝে কিছু অভ্যাস ছিল। যে অভ্যাসগুলো তার গার্লফ্রেন্ড ময়না সহ্য করতে পারেনি।
আনোয়ার যাকে এতো ভালোবাসতো,সে কিনা তার কিছু অভ্যাসের জন্য তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এতোদিন সে দেখে এসেছে ছেলেরা মেয়েদের ছেড়ে আরেকজনকে ভালোবাসে। আরে এভাবে ছেড়েই যদি যাবি,তবে ভালোবাসলি কেন। কি দরকার ছিল ভালোবাসার। ময়না যাবার সময় বলে গেছে যবে থেকে তুমি এই অভ্যাস ত্যাগ করবে,তখন আমাকে পাবে। এটা কোনো কথা। ততক্ষণে স্কুলের সব বাচ্চারা বাড়িতে চলে যায়। তার কয়েকজন বন্ধু আছে। সিফাত, রাজু,ও তপন। হাতে থাকা সিগারেট ফেলে সে তপনের বাড়ির দিকে হাটতে থাকে। তপনের ঘরে তার মা বাবা ও ছোট এক বোন আছে।
আনোয়ার তপনকে ডাকলে ঘর থেকে তপনের ছোট বোন বের হয়ে আসে। সে কিছুক্ষণের জন্য তপনের বোন মিলির থেকে চোখ সরাতে পারেনি। আরে কিছুদিন আগেই তো মিলি অনেক ছোট ছিল। এই কদিনে মিলি এতো বড় ও অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। আনোয়ার ভাবে ময়না চলে গেছে তো কি হয়েছে। দেখি তপনের বোন মিলিকে পটাতে পারি কিনা। মিলি বলে ভাইয়া তো বাড়িতে নেই। আনোয়ার জিগ্যেস করে তপন কোথায় গেছে? ভাইয়া তো একটু বাজারে গেছে। সে শুধু মিলির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কি সুন্দর তার চেহারা ও কথা বলার ধরন। এরকম মেয়ে কয়জনের ঘরে হয়। সে ভাবে ইস্ মিলিকে যদি জীবনে পেতাম। জীবনে আর কোনো চাওয়া থাকতো না। মেয়েটা এতো সুন্দর কেন?
মিলি একটা চেয়ার দিয়ে বলে ভাইয়া আপনি বসেন। ভাইয়া হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। আচ্ছা ঠিক আছে আমি বসলাম তাহলে। মনে মনে সে ভাবে মাইয়া মানুষ কিভাবে এতো তারাতারি বড় হয়ে যায়। এইতো পাশের বাড়ির তন্নিকে সেদিন ছোট দেখেছিলাম।যে কিনা গরুর বাছুর দেখে ভয় পেতো,সেই মেয়েটিই আজ স্বামীর ঘরে। যাক মিলিও তো তারাতারি বেড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন মিলিকে কাছ থেকে দেখা হয়নি তাই হয়তো বোঝা মুসকিল মিলি এখন কতো বড় হয়েছে। মিলি তখন ঘরের ভেতর চিরুনি দিয়ে চুল আচরাচ্ছে। আনোয়ার চুপি চুপি বেড়ার ফাকে উকি দিয়ে মিলিকে দেখার চেষ্টা করে। এই মিলি এতো সুন্দর হয়েছে। মিলির সৌন্দর্য তাকে পাগল করে তুলছে।
যেই না তার রূপ সেইনা তার ব্যবহার। আহা কি সুন্দর তার চুল। সবমিলিয়ে আনোয়ার মিলির সৌন্দর্যে দিশেহারা। তপন এসে দেখে আনোয়ার বেড়ার ফাকে উঁকি দিচ্ছে। এটা দেখে তপন জিগ্যেস করে কিরে আনোয়ার তুই কখন আসলি? তপনের কথা শুনে আনোয়ার তারাতারি সেখান থেকে সরে আসে। এইতো কিছুক্ষণ আগে আসলাম।তা তুই কোথায় গিয়েছিলি? তপন বলে এই তো বাজার থেকে আসলাম। তুই বাহিরে কেন? চল ভেতরে গিয়ে বসি। তপনের সাথে আনোয়ারও ঘরে গিয়ে বসে। যেই ঘরে মিলি থাকে,তারা পাশের রুমে বসেছে। তপন তার তাকে ডাকে মা,কোথায় গেলা? মিলি বলে ভাইয়া মা তো পাশের বাড়িতে গিয়েছে। তপন বলে আচ্ছা মিলি তুই এক কাজ কর,একটু কষ্ট করে চা বানিয়ে নিয়ে আয়।
__আচ্ছা এখন বল ময়নার খবর কি?
__আরে বলিস না আমার কিছু অভ্যাসের কারনে সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
__আচ্ছা তুই মন খারাপ করিস না। ময়নার চাইতে ভালো কোনো মেয়ে তোর জীবনে আসবে। এখন অন্তত মনটা হালকা কর।
__হ্যাঁ দোস্ত তুই ঠিকই বলেছিস,আমার জীবনে সত্যিই সুন্দরী কোনো মেয়ে অপেক্ষা করছে।
ততক্ষণে মিলি চা নিয়ে আসে।
তপন বলে দোস্ত নে চা নে। দুজনেই চা পান করার ফাকে ফাকে গল্প করছে। মিলির হাতে বানানো চা আনোয়ার খুবই তৃপ্তির সাথে পান করছে। যদিও চিনি ছাড়া চা,তবুও তো মিলি বানিয়েছে। সে চিনিছাড়া চা এখন অমৃত মনে করে পান করে যাচ্ছে। বাহ্ খুব সুন্দর চা হয়েছে। পাশ থেকে মিলি হাসতে হাসতে বলে উঠলো এটাকে সুন্দর চা বলে না,সুন্দর তো দেখতে হয় তাই এভাবে না বলে ভালো হয়েছে বা টেস্ট হয়েছে। মিলির কথা শুনে আনোয়ার একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার যেন চোখের পলকই পরছে না। মেয়েটা কতো সুন্দর করে কথা বলে। মনে হচ্ছে স্বর্গের অপ্সরী পৃথিবীতে নেমে এসেছে। তপন বলে বাবা তো মিলির বিয়ের জন্য উঠেপরে লেগেছে। কিন্তু মিলি তো ছোট মানুষ সে আরো পড়তে চায়। আনোয়ার বলে হ্যাঁ মিলি একদম ঠিক কাজটিই করেছে।
আচ্ছা দোস্ত আজ তাহলে উঠি। চল না সামনে যায়। যাওয়ার সময় আনোয়ার মিলির দিকে একনজর দেখে। তারা দুজনে হেটে রাস্তায় চলে যায়। এদিকে সন্ধা হয়ে আসছে। তপন বলে দোস্ত আমার একটু কাজ আছে আজ তাহলে যাই। আনোয়ার বাড়ি ফিরে যায়। আজ এমনিতেও মনটা তার ভালো না,তাই সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ ময়নার কথা ভাবে। আরে যে গেছে তাকে নিয়ে এতো ভাবলে হবে! এখন তো আমি শুধু মিলিকেই ভালোবাসি। হঠাৎই তার বাবা এসে ধমক দেয়। পড়ালেখা বাদ দিয়ে শুয়ে থাকলে চলবে? যা এখন পড়তে বস। এই যা এই পড়ালেখা আর ভালো লাগে না। জীবনে পড়ালেখা না থাকলে কাতোইনা না ভালো হতো।বাবার কথামতো সে পড়তে বসে। পড়ায় তার একটুও মন বসে না। তার শুধু মিলির সুন্দর চেহারাটা বারবার মনে পরছে। মিলিকে সসে এক মুহুর্তের জন্য ভূলতে পারছে না।
যেভাবেই হোক তার মনের কথাটা মিলিকে বলতে হবে। রাতের খাবার খেয়ে সে শুয়ে পরে। মাঝরাতে ….চারপাশে নিরব শুনশান। আনোয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে পুকুরপাড়ে যায়। পুকুরপাড়ে দাড়িয়ে সে ভাবে,কেন সে এই মাঝরাতে পুকুরপাড়ে এসেছে। তখন সে দেখতে পায় পুকুরের এক পাশে তার মা আর অন্য পাশে মিলি দাড়িয়ে আছে। সেখান থেকে তাকে কে যেন অদৃশ্য কন্ঠে বারবার বলছে তুই কাকে চাস?তোর মাকে নাকি মিলিকে? আনোয়ার অনেক কঠিন পরীক্ষার মধ্যি পরে যায়।
সে কিছু বলতেই যাবে তখনি তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তার পুরো শরীর ঘেমে একাকার। এক গ্লাস পানি পান করে শুয়ে ভাবছে, এসব আমি কি দেখলাম। স্বপ্নে মৃত মাকে দেখলাম তাও মিলির সাথে। এটার মানে কি! সে পরদিন সকালে এলাকার মসজিদের ইমামকে বেপারটি জানায়। ইমাম সাহেব বলে এটা শয়তান তোমাকে ভ্রমে ফেলেছে। আর তুমি এক কাজ করো, তোমার মায়ের জন্য নামাজ পরে দোয়া করো ও বেশি বেশি দান করো। আর মিলি নামক মেয়েটির সাথে সবসময়ই ভালো সম্পর্ক রাখবে। ঠিক আছে বলে আনোয়ার বাড়িতে চলে আসে। মা ছাড়া বাড়িটা শূন্য লাগছে। যার মা নেই আসলে বেপারটা তারাই গভীরভাবে উপলব্ধি করবে।
একবার না খেলেও কেউ খাওয়ার জন্ বাড়াবাড়ি করে না। অসুস্থ থাকলেও কেউ সেবাযত্ন করে না। তখন তার মায়ের সাথে রাগারাগির কিছু মুহূর্ত মনে পরে। যার জন্ সে কান্না করে। পরক্ষণেই সে রেডি হয়ে কলেজে যায়। তার কিছুই ভালো লাগছেনা। পরিবারে তার ছোট একটি বোন আছে। কলেজ থেকে ফেরার সময় ভাবে মিলির সাথে দেখা করলে ভালো হতো। মনটা তার কেমন হাহাকার করছে। কিছুক্ষণ পর সে এক লোকের কাছে শুনতে পায় তার বাবা নাকি আরেকটা বিয়ে করতে যাচ্ছে। এটা শুনে সে মিলির বাড়িতে না গিয়ে তার বাড়ি চলে যায়। তার কিছুই ভালো লাগছে না। কিছুদিন হলো তার মা মারা গেল,তার শোক ভূলতে না ভূলতেই কিভাবে তার বাবা আরেকটি বিয়ে করে!
সেদিন সন্ধ্যাবেলায় আনোয়ার তপনের বাড়ি যায়। আর সেখানে গিয়ে দেখে মিলি বাড়ির পুকুরে তার ভাবির সাথে গোসল করছে। আনোয়ার কিছুক্ষণ সেখানে দাড়িয়ে থাকে। তপন এসে বেপারটা খেয়াল করে। সে প্রচন্ডভাবে ক্ষেপে যায়। আনোয়ারের কলারে ধরে টেনে একটু আড়ালে নিয়ে যায়। বেপারটা তপনের বোন মিলি খেয়াল করে। তপন রেগে গিয়ে আনোয়ারকে অনেক কথা বলে। তোকে এতো ভালো জানতাম। ছিঃ তুই এরকম জানলে তোর সাথে আমি বন্ধুত্ব করতাম না। আনোয়ারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তপন যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছে। শেষমেষ কিনা তুই আমার বোনের দিকে কুদৃষ্টি দিয়েছিস! তোকে আমি শেষবারের মতো বলছি আর যেন আমাদের বাড়ির আশেপাশে না দেখি। ভূলেও মিলির দিকে তাকাবি না। আনোয়ার বলে আসলে তুই যা ভাবছিস সেরকম কিছু হয়নি। তপন খেপে যায়। বলে আমি তোর কোনো কথায় শুনতে চাইনা। তুই যা এখান থেকে।
তুই আমাকে ভূল বুঝলি একথা বলে আনোয়ার সেখান থেকে চলে আসে। যদিও সে মিলিকে ভালোবাসে। কিন্তু সে তখন কথাটা বলতে সাহস পায়নি। তপন তো নিষেধ করে দিয়েছে তাদের বাড়ির আশেপাশে যেতে। এখন কিভাবে সে মিলির সাথে দেখা করবে মিলিকে একটা নজর দেখবে। পরক্ষণেই ভাবে মিলি যখন স্কুলে যাবে তখনই সে সুযোগটা কাজে লাগাবে। সেদিন রাতে আনোয়ার ঘুমিয়ে আছে। মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। কে যেন তাকে ডাকছে। আরে এতো রাতে কে হতে পারে ! আরে এটাতো মিলির গলা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তা মিলি এতো রাতে আমাকে ডাকবে কেন?
সে কিছুটা অবাক হয়ে ভাবে। সিনেমা ও গল্পে সে অনেক শুনেছে জেনেছে যে রাতে এভাবে কেউ ডাকলে ঘর থেকে না বেরোনোটাই ভালো। অনেক সময় খারাপ কিছু কাছেরজন বা প্রিয়জনের ছন্নবেশ ধারন করে দেখা দেয় বা ডাকে। এসব ভেবে আনোয়ারের গায়ে কাটা দেয়। তাহলে কি এটা কোনো ছদ্নবেশী শয়তান ! না এটা অবিশ্বাস্য নয়। কেননা একটা উঠতি বয়সের মেয়ে এতো রাতে বাহির থেকে তাকে ডাকবে কেন। সে চুপ করে থাকে। যাই হয়ে যাক না কেন,ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।
সে কোনোকিছুই না ভেবে শুয়ে পরে। পরদিন সকালে সে নাস্তা খেয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরে। আজ যেভাবেই হোক মিলির সাথে দেখা করতেই হবে। কলেজ শেষে সেই রাস্তায় অপেক্ষা করে,যে রাস্তে দিয়ে মিলি বাড়িতে যাবে। কিন্তু দীর্ঘসময় অপেক্ষা করার পর মিলি আসে না। তার মানে আজ কি তবে মিলি স্কুলে যায়নি। মিলির বান্ধবী তুলির কাছে জানতে পারে মিলি নাকি অসুস্থ। গতকাল থেকে তার অসুখ করেছে। আহা আমার পরান পাখিটা অসুস্থ , আর আমি জানিনা। যেভাবেই হোক মিলিকে একটা নজর দেখা লাগবেই। কিন্তু তপন তো তাকে তাদের বাড়িতে যেতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।
সে তুলিকে বলে আচ্ছা তুমি আমাকে একটু উপকার করতে পারবে? এই ধরো মিলির ভাই তপনকে এই চিঠিটা পৌছে দিবে। প্রথমে তুলি রাজি হতে না চাইলে,আনোয়ার তাকে কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে তুমি আর না করবে না। টাকা পেয়ে তুলি রাজি হয়ে গেল। সে যাওয়ার সময় চিঠিটি নিয়ে তপনের হাতে দেয়। তপন চিঠি পড়ে। চিঠিতে লেখা মিলিকে কেউ তাবিজ করেছে। তাই আজ মিলি অসুস্থ। তুই যদি মিলিকে বাচাতে চাস,তাহলে বাড়ির পাশে ভিটায় গিয়ে সেখানে একটি বটগাছ দেখবি। সেই গাছের কোনো এক ডালে একটি তাবিজ বাধা আছে। সেটা খুলে ফেললে মিলি ভালো হয়ে যাবে।
এই চিঠি পড়ে তপন তুলিকে জিগ্যেস করে, আচ্ছা তুলি এই চিঠি তোমাকে কে দিল? তুলি বলে আমি তাকে চিনিনা। তপন চিন্তায় পরে যায়। এটা কার কাজ হতে পারে। মনের সন্দেহ দূর করার জন্য সে বটগাছ তলায় ছুটে যায়। এই সুযোগে আনোয়ার মিলির বাড়িতে যায়। মিলি বিছানায় শায়িত তার ঠিক পাশেই তার মা ও ভাবি বসে আছে। সে মিলির কাছে যেতেই তার মা বলে গতকাল থেকে মিলি অসুস্থ। কিছু খাচ্ছেও না। সে কাছে থেকে দাড়িয়ে মিলিকে দেখছে আর ভাবছে,আহা মিলি কতো অসুস্থ হয়ে পরে আছে। তাকে এই অবস্থায় দেখে তার অনেক কষ্ট হয়।
আর কষ্ট হবেই না কেন, চোখের সামনে প্রিয় মানুষটাকে এভাবে অসুস্থ দেখলে যে কারোরই কষ্ট লাগবে। এটাই স্বাভাবিক। ততক্ষণে তপন সেই বটগাছের কাছে চলে যায়।আনোয়ার তখনও মিলির বাড়িতে অবস্থান করছে।যে মেয়েটা সবসময়ই হেসে হেসে কথা বলে। আজ তার এই করুন অবস্থা। আনোয়ার মনে মনে বলেই ফেলে হে আল্লাহ তুমি মিলির সব রোগ আমাকে দিয়ে দাও তবুও আমার মিলিকে সুস্থ করে দাও। মিলি চোখ মেলে তাকালে আনোয়ারের দিকে তার চোখ যায়। একসময় সে বাড়িতে চলে আসে। সেখান থেকে চলে আসার পর তার কিছুই ভালো লাগছে না। মিলি এখন কেমন আছে। সে কি আগের চেয়ে একটু ভালো হয়েছে।
সেদিন রাতে আনোয়ার তার ঘরের বাহিরে কারো উপস্থিতি টের পায়। কে যেন বারবার বলছে আমাকে বাঁচাও। বাঁচাও আমাকে! আরে আজ আবার কে এলো। গতরাতে মিলি তাকে ডেকেছিল। কিন্তু মিলি তো দুদিন যাবত অসুস্থ হয়ে ঘরে পরে আছে। তাহলে সেটা কে ছিল!! আজও একজন চিৎকার করছে। মনে সাহস নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ায়। দরজা খুলতেই সে দেখতে পায়,ঐ তো সামনেই নারকেল গাছের আড়ালে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে। পেছন থেকে দেখা মনে হচ্ছে এটা কোনো মেয়ে মানুষ হবে হয়তো। ঘরিতে তখন রাত দুইটা বাজে। এই সময় একা বাহিরে যাওয়াটা ঠিক হবে কি! না একবার গিয়েই দেখি না,সে টর্চ হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ততক্ষণে মেয়েটি নারকেল গাছের আড়ালে পুরো শরীর ঢাকা দিয়েছে।এখন আর মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে না।
আনোয়ার দৌড়ে সেই নারকেল গাছতলায় গিয়ে দাড়ায়। সে একপাশে দাড়িয়ে। অন্য প্রান্তে সেই মেয়েটি দাড়িয়ে আছে। কিন্তু সে যখনই গাছের অপর পাশে যায়,দেখতে পায় সেখানে কেউই নেই। একি মেয়েটি তো এখানেই দাড়িয়ে ছিল। এতো তারাতা‌ড়ি মেয়েটি কোথায় গেল! আর ঠিক তখনি গাছ থেকে সমানে নারকেল পরতে থাকে। আনোয়ার দৌড়ে গাছের নিচ থেকে সরে যায়। আর উপরে তাকাতেই সে দেখতে পায়,নারকেল গাছের উপরে মেয়েটি বসে আছে। আর তাকে উদ্দেশ্য করে সমানে নারকেল ছুড়ে মারছে।এটা দেখে সে ভয় পেয়ে দৌড়াতে থাকে। ঘরে প্রবেশ করেই সে দোয়া পড়তে থাকে। মনে মনে ভাবে কেন যে বের হতে গেলাম। তখনই বাহিরে প্রচন্ডভাবে বাতাস বয়তে শুরু করে। সে ভয়ে শুয়ে পরে ও মনে মনে দোয়া পড়তে থাকে।
পরদিন সকালে সে জানতে পারে তাদের বাড়ি সহ প্রায় সব বাড়ির গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পরেছে। এটা শুনে সে ভাবে রাতে সে যার পিছু নিয়েছিল,সে কতোটা ভয়ানক ছিল। ভাবতেই তার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। সে সময়মতো কলেজে যায়। ফেরার পথে ভাবে একবার মিলির খোঁজ নেওয়া দরকার। কিন্তু তপন তো তাকে নিষেধ করেছে। তাই সে কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তখন সে জানতে পারে এই মুহূর্তে তপন বাড়িতে নেই। সে কিছি ওষুধ আনতে গঞ্জে গিয়েছে। এর ফাকে সে মিলির বাড়িতে যায়। গিয়ে দেখে মিলি বিছানায় শুয়ে আছে চোখ দুটো তখনও বন্ধ। আজ মিলির পাশে কেউই নেই শুধু তার ছোটভাই ছাড়া। আনোয়ার মিলিকে কয়েকবার জিগ্যেস করে এখন তোমার কেমন লাগছে? আগের চেয়ে কি এখন একটু ভালো লাগছে? মিলি চোখ মেলে তাকায়।তার মুখে কোনো কথা নেই। চুপ করে আনোয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে।
আনোয়ার মিলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে গেলেই বাধে বিপত্তি। সজোড়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আনোয়ারের গালে। মিলির এমন আচরনে আনোয়ার সত্যিই অবাক হয়ে যায়। একি মিলি আমার সাথে এমন আচরন করল কেন। মিলি বলে আপনাকে অনেক ভালো ভাবতাম। কিন্তু আপনি একটা অ-মানুষ আর চরিত্র-হীন। সেদিন লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের গো-স-ল দেখেছেন, এখন আবার এসেছেন আমাকে সেবা করতে। আপনার সাহস হয় কি করে আমার গায়ে স্পর্শ করার। আপনার তো মতলব ভালো না। কাওকে ডাকার আগেই ভালোই ভালো এখান থেকে চলে যান। আনোয়ার মিলির এমন আচরনে কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা। গালে হাত রেখে আনোয়ার সেখান থেকে বেরিয়ে পরে। তখনই সেখানে মিলির মা চলে আসে। আনোয়ারকে সেখানে দেখে তার মা জিগ্যেস করে মিলি তোর কি হয়েছে? আনোয়ার এখানে কেন? মিলি কিছু বলে না। চুপ করে শুয়ে আছে।
এদিকে আনোয়ার মন খারাপ করে বাড়িতে না গিয়ে,পরিত্যক্ত একটা ভিটায় গিয়ে সমানে সিগারেট টানতে থাকে। 🚭ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর 🚭। তার দুচোখ বেয়ে পানি পরছে। তার কাছে কিছুই ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে এই পৃথিবীটা তার জন্য নয়। একে তো তার প্রথম গার্লফ্রেন্ড ময়না তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। এখন আবার মিলিও তার সাথে এমন আচরণ করলো। মিলির হাতে থাপ্পড় খেয়ে আনোয়ার কিছুতেই তা মেনে নিতে পারছে না। ভেবেছিল কি,আর হয়ে গেল কি! তখনই সে সিদ্ধান্ত নেয়,সে আর নিষ্ঠুর এই পৃথিবীর বুকে থাকবে না। সে তার মায়ের কাছে চলে যাবে। এই মুহূর্তে সে তার মাকে খুব বেশি মিস করছে। মা,, মা,, বলে কয়েকবার চিৎকার করতে থাকে। আর বাঁচতে চায়না সে।
যে পৃথিবীতে তার মা তাকে ছেড়ে পরপারে চলে গিয়েছে। তার গার্লফ্রেন্ড ময়নাও তাকে ছেড়ে দিয়েছে। এখন মিলিও তাকে অপমান করলো খারাপ আচরন করলো।ঐ মা আমাকে নিয়ে যাও তোমার কাছে। এখন সে ম-রতে চায়। সেখান থেকে বাড়িতে আসার পর জানতে পারে তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেছে। ঘরে তার আরেকটি নতুন মা। আনোয়ার কাওকে কিছু না বলে, মন খারাপ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। উদ্দেশ্যহীনভাবে সে হাটতে থাকে।
একটি গভীর জঙ্গলে গিয়ে সবথেকে উচুঁ একটি গাছ বেছে নেয়। যদিও সে গাছে চড়তে পারে না। তবুও অনেক কষ্টে গাছটির সবচেয়ে উচুঁতে উঠে। কেন সে গাছে উঠেছে,তা তো সবারই জানা। উদ্দেশ্য একটাই এখান থেকে লাফ দিয়ে আ-ত্ন-হ-ত্যা করা। কিন্তু এখানে উঠার পর ভয়েতে তার হাত পা কাঁপছে। কেননা সে তো এর আগে কখনোই গাছে উঠেনি। তাও এতো বড় গাছের সবচেয়ে উঁচুতে। যেভাবেই হোক ভয়কে উপেক্ষা করে তাকে লাফ দিতেই হবে। কিছুক্ষণের পর হয়তো সে বেঁচে থাকবে না। তাই সে শেষবারের মতো চারপাশটা দেখে নিল। তার মায়ের কথা খুব মনে পরছে। তার দুচোখ বেয়ে তার পানি পরছে।’
সে কিছুক্ষণ মিলির কথা ভাবে। আরেকবার তার মায়ের কথা ভাবে। কান্নাজরিত কন্ঠে চিৎকার করে বলতে থাকে এই পৃথিবী টা আমার জন্য নয়। মা আমি আসছি বলেই সে গাছ থেকে লাফ দেয়…! সে লাফ দেয় ঠিকই, কিন্তু তার কিছুই হয়না। অলৌকিকভাবে সে বেঁচে যায়। আর সে যেখানে পরেছে তার ঠিক পাশেই সেখানে কিছু একটা আপনাআপনি নড়ছে। আর সে বুজতে পারে এটা তো একটা কাঠি। আরে আজব তো, একটা কাঠি কিভাবে আপনাআপনি নড়ছে! সে ধরতে গেলেই সেটা স্থির হয়ে যায়। কাঠিটি দেখতে অদ্ভুত ধরনের কেমন যেন মনে হচ্ছে। আনোয়ার কাঠিটি হাতে নিতেই তার পুরো শরীরে একটা ঝাঁকুনি খায়। কি এটা,আর সব কাঠি থেকে আলাদা। এটা দিয়ে কি কোনো কাজে আসবে! দ্যাত এসব কাঠি এখানে কোথা থেকে আসলো! এই বলে সে কাঠিটি ছুড়ে ফেলতে চেয়েছিল। না এটা সে ফেলবে না। আর এটা খুজেঁ পাওয়ার পর থেকে তার আত্নহত্যার বেপারটি সম্পূর্ণ ভূলে যায়।
থাক না এটা দিয়ে কোনো না কোনো কাজে আসতে পারে। দেখতেও তো সুন্দর। কাঠিটি সে তার সাথে রাখে। এদিকে সন্ধা হয়ে আসছে প্রায়। বাড়ি ফিরতে হবে। বাড়িতে গিয়ে সে দেখতে পায় তার বাবা নতুন মাকে নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত। তার বাবা তাকে যেন দেখতেই পারছে না। কেননা তপন তার বাবার কাছে বিচার নিয়ে এসেছে। আজ সে মিলির বাড়িতে গিয়ে মিলির মাথায় হাত রেখেছিল। তাতেই যতো ঝামেলা। তার বাবা তাকে অনেক কথা শুনায়। তেকে সাফ জানিয়ে দেয় তোর পথ তুই দেখ। আমি আর তোকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না। তুই যা করেছিস,ছিঃ আমার বলতেও ঘৃণা হচ্ছে। এসব জেনেশুনে তোকে আমি এ বাড়িতে থাকার অনুমতি দিতে পারি না।
তোর যেখানে খুশি চলে যা। এটা শুনে আনোয়ার অনেক কষ্ট পায়। যত ঝামেলা হয়েছে ঐ তপনকে নিয়ে। সে বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলছে।দাতে দাত কামড়ে সে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে সে তার অন্য এক বন্ধুর বাড়ি চলে যায়। তার বন্ধুর নাম রিফাত। সবকিছু শুনে রিফাত বলে তাহলে এই বেপার,আরে তুই কোনো চিন্তা করিসনা। যতোদিন না তোর বাবার মাথা ঠান্ডা হচ্ছে,ততোদিন তুই এই বাড়িতেই থাকবি। এই না হলে বন্ধু। বন্ধু হয়ে বন্ধুর বিপদে না আসলে এমন বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
চলবে…

Leave a Comment

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.